সঙ্গম যুগের সাহিত্যের বিকাশের উপর একটি প্রবন্ধ রচনা কর।

সঙ্গম সাহিত্য –
প্রাচীন যুগে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু অঞ্চলে তামিল সাহিত্যের বিকাশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন ধরণের সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল, যা সঙ্গম সাহিত্য নামে পরিচিত। ‘সঙ্গম’ কথাটি একটি দ্রাবিড় শব্দ।সঙ্গম কথাটির অর্থ হল গোষ্ঠী, সমাজ বা পরিষদ। তামিল সাহিত্যের আদি যুগের কবি গোষ্ঠীর দ্বারা সঙ্গম সাহিত্য রচিত হয়েছে। ১০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী এই ২০০ বছরের সময়কালে সঙ্গম সাহিত্য রচিত হয়েছে। সঙ্গম সাহিত্য সম্পর্কে নিন্মে বিস্তারিত আলোচনা করা হল –

সঙ্গম সাহিত্যগোষ্ঠী ঃ
প্রাচীন তামিলনাড়ুর ইতিহাস অনুসারেতামিল সাহিত্যে তিনটি সঙ্গম বা কবি পরিষদের কথা জানা যায়। প্রাচীন মাদুরাই শহরে প্রথম সঙ্গম কবি পরিষদ স্থাপিত হয়েছিল, যার সভাপতি ছিল মহামুনি অগস্ত্য। এই কবি পরিষদে ৫৪৯ জন সদস্য ছিল। ৪৪৯৯ জন কবির কবিতা সঙ্গম কবি পরিষদে অনুমোদন পেয়েছিল। কপাতপুরম শহরে সঙ্গম সাহিত্যের দ্বিতীয় কবি পরিষদ স্থাপিত হয়েছিল। এই পরিষদে ৪৯ জন সদস্য ছিল। তৃতীয় কবি পরিষদ স্থাপিত হয়েছিল উত্তর মাদুরাই শহরে। সঙ্গম যুগে এই তিনটি কবি পরিষদ বহু কবিতা ও গ্রন্থ রচনা করেছিল, যা তামিল সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল।

সঙ্গম সাহিত্য ঃ
সঙ্গম যুগে রচিত সাহিত্যগুলিকে সঙ্গম সাহিত্য বলা হয়। ঐতিহাসিক শ্রীনিবাস আয়েঙ্গারের মতানুসারে, সঙ্গম সাহিত্য তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা – (i) বর্ণনামূলক দশটি কবিতা বা কবিতা দশক, (ii) অষ্টসংকলন এবং (iii) অষ্টাদশ নীতিমূলক কবিতাগ্রন্থ।

বর্ণনামূলক দশটি কবিতা বা কবিতা দশক :


সঙ্গম যুগের অন্যতম প্রধান একটি দিক ছিল বর্ণনামূলক দশটি কবিতা বা বর্ণনামূলক কবিতা দশক। এই কবিতাগুলি থেকে দেবতা মুরুগানের পূজা ও তাঁর মন্দিরের বিবরণ, রাজা ও রানিদের জীবনের বর্ণনা, প্রাচীন তামিল সামাজিক জীবনের বর্ণনা ইত্যাদি পাওয়া যায়। যেসব উল্লেখযোগ্য কবি এই কবিতাগুলি রচনা করেছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নক্কীরর, উরুত্তিরঙ্গন্নার, মরুথার, নপ্পুথনার প্রমুখ।

অষ্টসংকলন :


অষ্টসংকলন ছিল সঙ্গম যুগের সাহিত্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ। এটি ছিল মূলত আটটি গ্রন্থের সংকলন। বিভিন্ন ধরণের গীতিকবিতা নিয়ে সংকলনগুলি তৈরি করা হত। অন্তত কয়েকশত কবির লেখা বিভিন্ন ধরণের কবিতা অষ্টসংকলন-এ সংকলিত হয়েছে। রাজাদের জীবনচর্চা, প্রেম, বিরহ, মিলন, সমাজজীবন প্রভৃতি ছিল কবিতাগুলির বিষয়বস্তু। সঙ্গম সাহিত্যের অষ্টসংকলন-এর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবি ছিলেন কপিলর, অবৈব, পেরুম-সিত্তিরনার প্রমুখ।

অষ্টাদশ নীতিমূলক কবিতা :


সঙ্গম যুগে রচিত আঠারোটি নীতিমূলক কবিতা নিয়ে গড়ে উঠেছিল অষ্টাদশ নীতিমূলক কবিতা। সঙ্গম সাহিত্যের এই ভাগের মধ্যে জৈন কবিদের লেখা নালদিয়ার, তিরুবল্লুবর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ কুরল ইত্যাদি ছিল বিখ্যাত নীতিমূলক গ্রন্থ, যা সঙ্গম সাহিত্যকে পূর্ণতা দান করেছিল।
সঙ্গম সাহিত্যগুলি মূলত চোল, পাণ্ড্য ও কেরলের রাজাদের আনুকূল্যে রচিত হয়েছিল। সঙ্গম যুগে তামিল সাহিত্য, তামিল কবিতা, তামিল কাব্য ইত্যাদি বিষয়ের ব্যাপক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন পেশা ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সঙ্গম সাহিত্য রচনায় অংশগ্রহণ করত। তবে একথা বলতেই হয়, সঙ্গম সাহিত্যের মাধ্যমে তামিল সাহিত্য এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে, যা ভারতের সাহিত্যের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading