সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর পরিধি কি?

সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা-

সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র। এতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। অগাস্ট কোঁৎ- এর Positive Philosophy গ্রন্থে প্রথম Sociology শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি (Nature of Educational Sociology)


শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব পরস্পর মিলিত ভাবে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব। এই শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের স্বরূপ বা প্রকৃতি নির্ণয়ে আমরা দেখতে পাই শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব একে অপরের দ্বারা পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট হয়ে গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি নির্ণীত হয়। 

Young বলেছিলেন, মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব। তাই শিক্ষাবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের প্রয়োগগত শাখারূপে তৈরি করেছে শিক্ষামূলক সমাজতত্ত্ব। 

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের প্রকৃতিগত দিক হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া। অর্থাৎ সমাজজীবনে সামাজিক গোষ্ঠী, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাপেক্ষে যথার্থ সামাজিকীকরণে উন্নত করে তোলা। এই জন্য সমাজতত্ত্ব দিয়েছে তত্ত্ব এবং তথ্য ও শিক্ষাবিজ্ঞান দিয়েছে নীতি ও কৌশল। এই দুয়ের মিলিত প্রবাহে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব। তার ফলে সমাজ , শ্রেণি , মানুষ , গৃহ থেকে বিদ্যালয় বিদ্যালয় , বিদ্যালয় থেকে মহাবিদ্যালয় এবং মানুষের কর্মক্ষেত্রে সবই সুষম বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং সমাজে  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায়বিচার ও ন্যায়বোধ , বিচার ব্যবস্থা , সমান অধিকার , সকল ক্ষেত্রেই  সম সুযোগ এবং পারস্পরিক মেলবন্ধন। 

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার যে সকল প্রকৃতি দেখা যায়, তা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

  1. প্রয়োগমূলক শাখা: সমাজবিদ্যার একটি প্রয়োগমূলক শাখা হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা। শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ ঘটে।
  2. শিক্ষা সমাজের সম্পর্ক: শিক্ষার সাথে সমাজের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা আলোচনা করে থাকে।
  3. সমাজের অগ্রগতি উন্নয়ন: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতি হল শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও বিকাশ সাধন।
  4. সামাজিক প্রক্রিয়ার প্রয়োগ: শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যার সাহায্যে শিক্ষাক্ষেত্রে যথাযথভাবে সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির সঠিক প্রয়োগ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
  5. ব্যাক্তি সমাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন: শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজবিদ্যার নীতি ও পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকে।

সেহেতু, শিক্ষা ও সমাজ তত্ত্বের আদর্শে তৈরি হয়েছে নানারকম সামাজিক প্রতিষ্ঠান যথা- বিদ্যালয়, ক্লাব, ধর্মীয় সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংস্থা ও ক্রীড়া সংস্থা। এবং এগুলির মধ্যেদিয়ে ব্যাক্তিদ্বয়ের সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক পরিবর্তনশীলতা, সামাজিক অগ্রগতি, সামাজিক প্রক্রিয়া এবং সামাজিক সংগঠনে প্রযুক্ত হয়েছে বিজ্ঞান চেতনার সুষম প্রগতি সাধিত হয়ে থাকে।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি (Scope of Educational Sociology)

শিক্ষা বিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব পরস্পর যুক্ত হয়ে ব্যক্তি ও সমাজের মঙ্গল সাধনে অগ্রসর হয়েছে এবং সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে সুস্থ ও সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। বিভিন্ন সমাজবিদ্ বিভিন্নভাবে এবং আঙ্গিকে সমাজকে ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁদের সেই বক্তব্যগুলি বিশ্লেষণে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পরিধি সুস্পষ্ট হয়। যেমন –

  1. ব্যাক্তির জন্ম থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জীবন বিকাশের প্রত্যেক স্তরে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান প্রভাব বিস্তার করে।
  2. জনসমষ্টি দেশের অন্যতম সম্পদ যার দ্বারা একদিকে যেমন সুস্থ সমাজ তৈরি হয় ও   অন্যদিকে তৈরি হয় যথার্থ শিক্ষাব্যবস্থা। তাই শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পরিধির অন্যতম উপকরণ হলো জনসমষ্টি ও তার প্রকৃতিগত উন্নয়ন সংস্থা এবং প্রকৃতিগত উন্নয়ন হল সমস্যা এবং প্রগতিগত উন্নয়ন হল  অভিমুখী শিক্ষাভাবনা।
  3. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের অপর একটি পরিধিভুক্ত বিষয় হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া। যার দ্বারা মানুষ দল গঠন করে এবং পারস্পরিক সংগতি বিধান করে। তাই মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতি প্রক্রিয়ার প্রকার সম্পর্কে আলোচনা করে এই বিষয়।
  4. বর্তমানকালে বিভিন্ন সাম্প্রতিক সমস্যা, যেমন- বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, নিরক্ষরতা, ধর্মীয় বিভেদ ইত্যাদির মত সামাজিক সমস্যাগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
  5. সকল ব্যবস্থাপনার মূলে যে সম্পদ সেটি হল মানবসম্পদ। সুতরাং মানবসম্পদের প্রকৃতিগত দিক বিশ্লেষণ এই শাখার গুরুত্বপূর্ণ পরিধিযুক্ত বিষয়।
  6. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পরিধি হল সামাজিক গঠন। সমাজ গঠনের প্রকৃতি, নিয়ম,  রীতিনীতি, গোষ্ঠীচেতনা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে এই বিষয়টি।
  7. আধুনিক গতিশীল সমাজব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা, কার্যাবলী সম্বন্ধেও এই শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়ে থাকে।
  8. সামাজিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি গোষ্ঠীজীবনের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি এবং তাৎপর্য আলোচনা করে শিক্ষাবিজ্ঞানের সাপেক্ষে।

শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান জীবনবিকাশের এবং শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। মানবজীবনের বিকাশ সাধনে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গুলি আয়ত্ত করতে সহায়তা করে থাকে, এর ফলে একজন সাধারণ মানুষ সামাজিকজীবে পরিণত হয়ে থাকে।

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading