সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যগলো কী কী?

সময় সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য: সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আচার- আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে, সমাজ কাঠামো বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কতগুলি উদ্দেশ্য লক্ষ করা যায়। যথা-

* প্রথমত, সামাজিক প্রবৃত্তি বজায় রাখে: ব্যক্তি সমাজে তার আচার-ব্যবহার প্রকাশ করে থাকে সামাজিক জীব হিসাবে, সমাজ নির্দেশিত পথে। সাধারণত ব্যক্তি ছোটোবেলা থেকে তার সামাজিক প্রবৃত্তিগুলি লাভ করে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। একদিকে ব্যক্তি যেমন সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজ নির্দেশিত পথে চলে, সামাজিক নিয়ন্ত্রণও অন্যভাবে এর থেকে কোনো বিচ্যুতি ঘটে কি না তা দেখে।

* দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠী ও সমাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সমাজ যে শুধুমাত্র তার সংহতি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে তা নয়, এর ধারাবাহিকতা রক্ষায়ও সচেষ্ট। সমাজের ভবিষ্যৎ সামাজিক ধারাবাহিকতার ওপর নির্ভরশীল। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের ও গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার-আচরণের একটি ধারা তৈরি হয় যা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে যায়। এইভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সমাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

* তৃতীয়ত, ব্যক্তিজীবনে নিরাপত্তা প্রদান করে: কোনো ব্যক্তির আচরণ অন্যকে যেমন প্রভাবিত করে, অন্যের আচরণ দ্বারাও কোনো ব্যক্তি প্রভাবিত হয়। ব্যক্তির অসামাজিক আচরণ বা সমাজরুদ্ধ আচরণ অন্যদের সমস্যায় ফেলতে পারে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে ব্যক্তিবর্গ ভরসা পায় ও নিরাপত্তাজনিত আশ্বাস লাভ করে।

* চতুর্থত, সামাজিক সংহতি রক্ষা করে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ব্যক্তিবর্গের নানাবিধ স্বাধীন কার্যকলাপ ও আচরণ দেখা দিত। ক্ষতিকারক সামাজিক আচরণগুলি

সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা-সংহতি নষ্ট করে থাকে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের দ্বারা বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিদের আচার-ব্যবহারকে কাঙ্ক্ষিত পথে চালিত করে সামাজিক ভারসাম্য ও সামাজিক সংহতি রক্ষা করা হয়।

পঞ্চমত, সামাজিক আচরণে সাদৃশ্য আনে বর্তমান জটিল সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের আচরণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এই ক্ষেত্রে আচরণগত সাদৃশ্য আনায় ভূমিকা পালন করে।

ষষ্ঠত, ব্যক্তিকে সঠিক সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে: সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটি সামাজিক মর্যাদা আছে এবং সেই মর্যাদানুযায়ী ভূমিকা সমাজ তার কাছে প্রত্যাশা করে। প্রত্যাশিত ভূমিকা থেকে ব্যক্তি বিচ্যুত হলে সমাজ তার সমালোচনা করে থাকে। এইভাবে ব্যক্তির নির্ধারিত ভূমিকা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পালিত হয়ে থাকে।