. “স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়?”

মধুসূদন প্রথম কাব্য ‘তিলোত্তমাসম্ভব’-এ মহাভারতের কাহিনিকে নিয়ে নবচেতনায় অবতীর্ণ হলেন। এখানেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রয়োগ করলেন। মধুসুদনের অমর সৃষ্টি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১)। রামায়ণের ঘটনাকে সামনে রেখে তিনি প্রচলিত ধারণাকে পালটে দিয়ে এক নবনির্মাণে এগিয়ে গেলেন। মধুসূদনের প্রিয় চরিত্র রাবণ। রাবণের পিতৃহৃদয়ের আর্তনাদকেই তিনি বড়ো করে তুলেছেন। নয়টি সর্গে তিনি কাহিনিকে বপন করেন। ষষ্ঠ সর্গে মেঘনাদের মৃত্যু হলেও মধুদনের লক্ষ্য রাবণ, তাই আরও তিনটি সর্গে কবি কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। পুত্রহত্যার যন্ত্রণাকে মর্মে মর্মে তিনি উপলব্ধি করেছেন।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ সম্পাদনা করেছিলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই কবির মনে মহাকাব্য লেখার বাসনা জেগেছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি লিখে বসলেন ‘বৃত্রসংহার’ মহাকাব্য। স্বর্গ থেকে দেবতাদের নির্বাসন, বজ্র নির্মাণের জন্য দধীচির আত্মদান, সেই পিন্ড থেকে অস্ত্র প্রস্তুত ও তা দিয়ে বৃত্তের নিধন এবং পুনরায় দেবতাদের স্বর্গ উদ্ধার-এ কাব্যে বর্ণিত হয়েছে চব্বিশটি সর্গ জুড়ে। ইন্দ্র, শচী, বৃত্র, ঐন্দ্রিলা প্রভৃতি

চরিত্রগুলি সৃষ্টিতে হেমচন্দ্র মধুসূদনকে অনুকরণ করে বসেছিলেন। এজন্যই শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন-“আসলে ‘বৃত্রসংহার’ ‘মেঘনাদবধ’-এর বিচিত্র রসপুষ্ট এক পারিবারিক সংস্কার।” তবুও মহাকাব্যের ধারায় এ কাব্যের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না, ইতিহাসের খাতিরে।

বাংলা মহাকাব্যের ধারায় শেষ কবি নবীনচন্দ্র সেন। তাঁর কাব্যের নাম ‘রৈবতক কুরুক্ষেত্র প্রভাস’। কয়ের জীবনলীলা নিয়ে কবি উনিশ শতকের নবীন মহাভারত রচনা করতে চেয়েছেন। প্রথম খণ্ডে শ্রীকৃয়ের আদিলীলা, দ্বিতীয় খণ্ডে কৃষ্ণের মধ্যলীলা ও ‘প্রভাস’ খণ্ডে কৃয়ের অন্তলীলা নিয়ে কবি অবর্তীর্ণ হয়েছেন। দীর্ঘ চোদ্দো বছর ধরে কবি বিপুল চেষ্টায় এ কাব্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে সার্থক হতে পারেননি।

বাংলা মহাকাব্যের ধারার সার্থক ও শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও তাঁর কাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। অন্য দুজন কবি মহাকাব্য রচনা করতে গিয়ে মধুসূদনকে অক্ষম অনুকরণ করে বসেছেন। তবুও ইতিহাসের দাবিতে তাঁদের প্রতিভাকে আমাদের স্মরণ করতেই হবে। মধুসূদন যে ধারার সূচনা করেছিলেন, যোগ্য উত্তরসূরির অভাবে তা হারিয়ে গেল। তার জায়গা দখল করল বাংলা উপন্যাস।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading