হরপ্পা সভ্যতায় সামাজিক সংগঠন ছিল কিনা সে বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। এক শ্রেণির ঐতিহাসিক মনে করেন হরপ্পা সভ্যতায় শ্রেণিবিন্যাস ছিল না। কিন্তু বেশির ভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন হরপ্পা সভ্যতায় শ্রেণিবিন্যাস ছিল না। কিন্তু বেশির ভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন এই সভ্যতায় শ্রেণিবৈষম্য ছিল। ছোটো-বড়ো বাড়ি, বৃহৎ প্রাসাদ ও দুর্গ এই শ্রেণিবৈষম্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। এখানে ক্রীতদাস ব্যবস্থা চালু ছিল। এই ক্রীতদাসেরা শস্যাগার সংলগ্ন দু-কামরার ক্ষুদ্র কুটিরে বসবাস করত এবং শস্য মাড়াই করত এবং নর্দমা পরিষ্কার করত। লোখালে এই রকম দু-কুটির যুক্ত কামরার নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এখানকার শাসকরা অনেকটাই উদার মনোভাবাপন্ন ছিল। খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত নিদর্শন থেকে আমরা জানতে পারি যে এখানে পুরোহিত, ব্যবসায়ী, কারিগর, যোদ্ধা প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত।
হরপ্পা সভ্যতায় মানুষ রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন ছিল। কারণ মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রগতিশীল উন্নত কারিগরিবিদ্যা তারা গ্রহণ করেনি। হরপ্পায় শাসকশ্রেণি অস্ত্রের দ্বারা মানুষকে দমিয়ে রাখত। ফলে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য দেখা দিয়েছিল। অনেকে মনে করেন সমাজে শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হয়েছিল বলের দ্বারা নয়, ধর্মের দ্বারা। ধর্মীয় আচরণের অঙ্গ হিসেবে স্নানাগার, সভাগৃহ ও দুর্গের কথা বলা যায়।
হরপ্পা সভ্যতায় শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত ছিল। তার সাক্ষ্য বহন করে সীলমোহরের ওপর উৎকীর্ণ লিপিগুলি। যদিও এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার হয়নি তথাপি মনে করা হয় যে, একটি শিক্ষিত সম্প্রদায় হরপ্পা সমাজে গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া জানা যায়, হরপ্পার অধিবাসীদের জ্যামিতি, পাটিগণিত ও দশমিক গুণনে বিশেষ পাণ্ডিত্য ছিল।
হরপ্পা সভ্যতায় নারীদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল জন্মানো অস্বাভাবিক নয়। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের অবস্থা ছিল খারাপ। সিন্দু অধিবাসীদের মাতৃপুজার প্রচলন থেকে অনুমান করা যায় যে, তারা নারীশক্তিতে বিশ্বাসী ছিল। লোগালে পাশাপাশি শায়িত কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এর থেকে অনুমান করা হয় যে, হরপ্পা সভ্যতায় হয়তো সতীদাহ প্রথার ন্যায় কোনো নির্মম প্রথা প্রচলিত ছিল। আবার এও হতে পারে স্বামীর মৃত্যুর পর তার মৃত স্ত্রীকে স্বামীর সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।