1956 সাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পুনর্গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো। Discuss the reorganization of districts in North Bengal up to 1956

স্বাধীনতার মাশুল হিসেবে প্রাকৃতিক সীমানাশ্রিত উত্তরবঙ্গ থেকে রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও রাজশাহী-এই চারটি জেলাই যে শুধু পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় তাই নয়, সেইসঙ্গে অবশিষ্ট পাঁচটি উত্তরবঙ্গীয় জেলার অঙ্গচ্ছেদও করা হয়। র‍্যাডক্লিফ সাহেবের ওপর পড়েছিল এই সীমানা-নির্ধারণের দায়িত্ব এবং তিনি তাঁর জটিল ও দুর্বোধ্য পদ্ধতিতে যেভাবে জেলাগুলিকে ভাগ করেছেন, তা মূলত একতরফা শাসকীয় সিদ্ধান্ত। উত্তরবঙ্গের প্রত্যেকটি জেলারই অঙ্গচ্ছেদ হওয়ায় জেলার সীমানার পুনর্নির্ধারণ এবং প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

1912 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1947 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মালদা জেলা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। 1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীন হলেও র‍্যাডক্লিফ সাহেব স্থির করতে পারেন না যে, মালদা পূর্ব পাকিস্তানের নাকি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। 17 আগস্ট জানা যায় মালদা জেলার ১টি থানা, যথা-শিবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর থানাকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি ঘোষণাক্রমে দশটি থানায় বিভক্ত, মহকুমাহীন এই খণ্ডিত জেলাকে আঙ্গিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। অনুরূপভাবে Radcliffe’s Award-এর ফলে দিনাজপুর জেলার পূর্বার্ধ পাকিস্তানের সঙ্গে এবং পশ্চিমার্ধের দশটি থানা নিয়ে মাত্র দুটি মহকুমায় বিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুর জেলা হিসেবে গঠিত হয়। [Vide Home (G.A.) Notification No. 548 G A dt. 23.2.48]। ন-বছর পরে Bihar and West Bengal (Transfer to Territories) Act-1956 অনুসারে পূর্ণিয়া জেলার একটি বৃহৎ ভূখণ্ড কেটে নিয়ে প্রথমে দার্জিলিং জেলার সঙ্গে এবং পরে পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আবার 1953 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে উত্তর ভূখণ্ডের মহানন্দা-উত্তরাংশের জমি দার্জিলিং-এর সঙ্গে এবং মহানন্দা-দক্ষিণাংশের জমি পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং নতুন মহুকমা ইসলামপুর গড়ে ওঠে।

‘র‍্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড’-এর ফলে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি থেকেও অনেক ভূখণ্ড পূর্ব পাকিস্তানের হস্তগত হয়। এইভাবে দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া থানার একাংশ, জলপাইগুড়ি জেলার তেঁতুলিয়া থানা, পঁচাগড় ও পাটগ্রাম থানা পূর্ব পাকিস্তান সীমানায় পড়ে যায়। এ ব্যাপারে কোচবিহার ভাগ্যবান, কারণ, কয়েকটি ছিটমহল ছাড়া, কোচবিহারকে প্রায় কিছুই হারাতে হয়নি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading