পারিবারিক আদালত কী, মামলার ধরন, মামলা করার প্রদ্ধতি | What is family court, types of cases, procedures for filing cases

পারিবারিক আদালত : প্রতিটি জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গণ্য হয়। যেহেতু পারিবারিক আদালতের মামলা সিভিল বা দেওয়ানী প্রকৃতির বিধায় সকল পারিবারিক সমস্যার সমাধান এখানে পাওয়া যাবে এমনটা ভাবা সঠিক নয়।
পারিবারিক আদালতে মূলত পাঁচটি পারিবারিক সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়।

১. বিবাহ বিচ্ছেদ

২. দাম্পত্য সর্ম্পক পুনরুদ্ধার

৩. মোহরানা

৪. ভরণপোষণ

৫. সন্তানের অভিভাকত্ব ও তত্ত্বাবধান

বিবাহবিচ্ছেদ : বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সব সময় আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে কেবল স্ত্রী আদালতে যেতে পারেন। এছাড়া স্ত্রী যদি স্বামীকে ‘খোলা’ বা ‘মোবারাত’ বিচ্ছেদে সম্মত করাতে পারেন, সে ক্ষেত্রেও আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

কাবিননামায় স্ত্রীর তালাক দেয়ার ক্ষমতা না থাকলেই কেবল আদালতে যেতে হবে। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী ৯টি কারণের মধ্যে যেকোনো একটি কারণে স্ত্রী তালাক প্রার্থনা করতে পারেন।

১. স্বামী চার বছরের বেশি সময় নিরুদ্দেশ থাকলে।

২. স্বামী দুই বছর খোরপোশ দিতে ব্যর্থ হলে।

৩. বিনা অনুমতিতে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে।

৪. স্বামী সাত বছর বা এর বেশি কারাদণ্ড ভোগ করলে।

৫. বিনা কারণে স্বামী তিন বছর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।

৬. স্বামী পুরুষত্বহীন হলে।

৭. স্বামী কুষ্ঠব্যাধি বা মারাত্মক যৌনব্যাধিতে ভুগলে।

৮. স্ত্রীর নাবালিকা অবস্থায় বিবাহ হলে এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপন না হলে সাবালিকা হওয়ার পর স্ত্রী তা অস্বীকার করলে।

দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার : কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন ব্যাহত হলে এবং সংসারে ফেরত না আসতে পারলে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

মোহরানা/দেনমোহর : স্বামীর পরিশোধ না করা দেনমোহরের জন্য স্ত্রী মামলা করতে পারেন। তাৎক্ষণিক মোহরানার জন্য যে তারিখে তা দাবি করা হয় এবং অগ্রাহ্য করা হয়, সে তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে এবং বিলম্বে মোহরানার জন্য বিচ্ছেদ ঘটার তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

ভরণপোষণ : স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ইচ্ছাকৃত অপারগ থাকেন, তাহলে স্ত্রী যেদিন থেকে ভরণপোষণের টাকা দাবি করবেন, সেদিন থেকে তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে।

সন্তানের অভিভাবকত্ব : সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজত নিয়ে কোনো বিরোধ হলে পারিবারিক আদালতে যাওয়া যেতে পারে। আইনগত বিবাহবিচ্ছেদের পর ছেলের সাত বছর বয়স এবং মেয়ের বয়োসন্ধি পর্যন্ত মা-ই সন্তানকে পালন করতে পারেন। উপযুক্ত বয়সসীমার নিচে যদি সন্তানের বয়স হয় এবং বাবা যদি মায়ের কাছে সন্তানকে না রাখতে দেন, তবে মা পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন।

এ পাঁচটি বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে আপনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। পারিবারিক এসকল বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই দেশে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

আদালতের আশ্রয় নেয়ার প্রদ্ধতি : উভয় পক্ষ যেখানে বসবাস করে বা সর্বশেষ বসবাস করেছে এবং যে পারিবারিক আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। তবে বিবাহবিচ্ছেদ, মোহরানা ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে স্ত্রী বসবাস করেন, সেই এলাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। দেনমোহর বা ভরণপোষণের পরিমাণ যতই হোক, মামলা করা যাবে।

পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র যা দরকার

১. কাবিন নামা
২. তালাক নামা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)
৩. ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন সনদ
৪. বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন কার্ড (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)
৫. ২য় বিবাহের কাবিন নামা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)

মামলার ধাপসমূহ :
১. মামলা দায়ের
২. সমন ফেরত
৩. জবাব দাখিল
৪. আপোষ মিমাংসা/বিচার্য বিষয় গঠন
৫. শুনানির তারিখ নির্ধারণ/প্রাথমিক শুনানি
৬. চূড়ান্ত শুনানি
৭. যুক্তি-তর্ক
৮. রায় ও ডিগ্রী

মামলার ধাপগুলো দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অন্য সকল মামলার তুলনায় পারিবারিক আদালতের মামলার কার্যক্রম অগ্রাধিকার দিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading