সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার ভূমিকা-
সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার ভূমিকা মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করে সমাজের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা যেসব ভূমিকা পালন করে সেগুলো নিম্নরূপ:
• স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টি ব্যক্তিকে সচেতন, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ করে গড়ে তুলতে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি তথা সমাজের এই গুণাবলির বিকাশ সম্ভব হয় না। শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই নিজ স্বার্থের কথা ভুলে অপরের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করে। শিক্ষা মানুষের সকল কুসংস্কার দূর করে জ্ঞানের আলো প্রদান করে। শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজের অনাকাঙ্ক্ষিত, অশোভিত কার্যাবলি থেকে নিজেদের দূরে রাখেন।
• অপরাধ হ্রাস: একজন শিক্ষিত লোকের পক্ষে সমাজের যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যসম্পাদনের সম্ভাবনা খুব কম। ফলে শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেতে থাকে।
• গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিয়ামক সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। শিক্ষা মানুষের চরিত্র গঠন, মননশীলতার উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করে। শিক্ষিত ব্যক্তি সাধারণত যেকোনো ধরনের অসামাজিক আচরণ থেকে দূরে থাকে। তাই বলা যায়, শিক্ষা সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকে।
• সামাজিক ঐক্য ও সংহতি রক্ষা: শিক্ষা সমাজের সকল ব্যক্তিকে একই চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করে। শিক্ষার উদারনীতি সকল ব্যক্তির মধ্যে অবারিত হস্তে জ্ঞান দান করে এবং আলোচনা করে সমাজ ও সমাজের বাস্তবতা নিয়ে। সমাজের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
• রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: শিক্ষাকে ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতাহীন উভয় দল রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া সকল ধরনের রাজনীতিতে হানাহানি, মারামারি, অন্তর্ষন্দু বিদ্যমান থাকে। এসব সমস্যার সমাধান শিক্ষা দ্বারা হয়ে থাকে। দেশের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্যে শিক্ষিত ব্যক্তিরা নির্দ্বিধায় এগিয়ে আসে।
• অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্যে শিক্ষার প্রয়োজন হয়। শিক্ষার সাথে যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত হয়। তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকাংশে শিক্ষার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
• চরিত্র গঠন ও শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি: শিক্ষা ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায় এবং উন্নত চরিত্র গঠন করে। উন্নত চরিত্র গঠনে শিক্ষা ব্যক্তির জীবনপ্রবাহকে সাবলীল করে যার মাধ্যমে ব্যক্তি শৃঙ্খলাবোধে আবদ্ধ হয়। উন্নত চরিত্র গঠন এবং শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে থাকে।
• নৈতিকতার উন্নয়ন: শিক্ষা ব্যক্তির নৈতিকতার জাগরণ ঘটায়। ব্যক্তির নৈতিকতার বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে সমাজ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দূরীভূত করা সম্ভব হয়।