সুপ্রিমকোর্টের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর।

সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ও আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা:

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পিরামিড সদৃশ বিচারব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থান করছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের প্রণীত আইন অনুসারে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে ১ জন প্রধান বিচারপতি এবং ৩০ জন সহকারী বিচারপতি-সহ সর্বমােট ৩১ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়।

সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা:


সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকা সংক্রান্ত কার্যাবলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দ্বৈত সরকারি ব্যবস্থা বলে পরিচিত। সংবিধানের ১৩১ নং ধারা অনুসরণ করে বলা যায় যে, আইনগত অধিকারের প্রশ্নে যে-সমস্ত মামলা রয়েছে সেগুলি একমাত্র সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা যায় এবং সুপ্রিমকোর্টই সেই সকল মামলার নিষ্পত্তি করতে পারে, সেই ক্ষেত্রগুলি সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত বলে চিহ্নিত হয়। সেইরূপ তিনটি ক্ষেত্র হল─

• (1) রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের বা কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের বিরােধের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এই বিরোধের সুষ্ঠু মীমাংসার জন্য একটি নিরপেক্ষ কর্তৃত্ব প্রয়ােজন হয়। সেই কর্তৃত্বের ভার সুপ্রিম কোর্টে উপর ন্যস্ত করা হয়েছে,

• (2) আইনগত অধিকারের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক বা একাধিক রাজ্যসরকারের বিরোধ বাধলে

• (3) অথবা কেন্দ্রীয় সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্যসরকারের সঙ্গে অন্যান্য কয়েকটি বা একটি রাজ্য সরকারের বিরােধ বাধলে অথবা দুই বা ততােধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ দেখা দিলে একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট ওইরূপ বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটাতে পারে।

এ ছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত আর-একটি ক্ষমতা হল ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনােরূপ বিরোধ উপস্থিত যদি হয় তাহলে সেই বিরোধের মীমাংসার দায়িত্বও এই মূল এলাকার উপরই ন্যস্ত করা হয়েছে [৭১ (১) ধারা]। এই ক্ষমতাগুলির জন্যই সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা অনেকেই অনন্য এলাকা (exclusive Jurisdiction) বলেও চিহ্নিত করেন।

সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা:

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা ক্ষমতা কখনােই সীমাহীন নয় (১৩১ নং ধারা), অর্থাৎ কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। যেমন一
• সংবিধান গ্রহণের পূর্বে যেসকল চুক্তি-সন্ধি বা সনদ প্রভৃতি সম্পাদিত হয়েছিল এবং যা আজও কার্যকর আছে সেগুলিকে কেন্দ্র করে কোনােরুপ বিরােধ দেখা দিলে তা সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকায় নিষ্পত্তি হয় না। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরােধ উপস্থিত হলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে কোনাে পরামর্শ চাইলে সংবিধানের ১৪৩ নং ধারা অনুসারে সুপ্রিমকোর্ট তখন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে।

• সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকা বিভিন্ন রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে অথবা এক বা একাধিক রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে বিরােধের মীমাংসা করতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা:

(1) সুপ্রিমকোর্টের আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা: সংবিধান অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট হল দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। আপিল আদালত বলতে বােঝায় অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা।

(2) আপিল এলাকার শ্রেণিবিভাগ: সুপ্রিম কোর্টের আপিল এলাকাকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা—
• (a) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল এলাকা,
• (b) দেওয়ানি আপিল এলাকা,
• (c) ফৌজদারি আপিল এলাকা,
• (d) বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে আপিল এলাকা।

[a] সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল এলাকা: সংবিধানের ১৩২ (১) নং ধারা অনুসারে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা সম্ভব হয়, যদি সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনাে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন জড়িত থাকে। তবে এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে যখন হাইকোর্ট এই ধরনের সার্টিফিকেট প্রদান করতে অস্বীকার করে। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যদি মনে করে যে, মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন জড়িত রয়েছে তাহলে সুপ্রিমকোর্টে আপিলের অনুমতি দিতে পারে।

এ ছাড়াও ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনক্রমে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ দিতে পারে। রাজ্যের হাইকোর্টের সঙ্গে যে-সমস্ত মামলা জড়িত থাকে, সেই মামলাগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য আইনের সাংবিধানিক বৈধতার কোনাে প্রশ্ন জড়িত থাকলে, সেই সমস্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তর করা হয়।

দেওয়ানি আপিল এলাকা:

দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ১৩৩ (১) নং ধারায় বলা হয়েছিল যে, হাইকোর্ট যদি এইরূপ সার্টিফিকেট প্রদান করে যে, মামলার বিষয়বস্তুর পরিমাণ কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা অথবা রায়, ডিক্রি বা চূড়ান্ত আদেশ যদি প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সমপরিমাণ মূল্যের সম্পত্তির সঙ্গে জড়িত থাকে কিংবা মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার উপযুক্ত, তাহলে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ তম সংশােধনে টাকার পরিমাণ বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৪৪ তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে একটি নতুন ব্যবস্থা সংযােজন করা হয়। সেই ব্যবস্থাটি হল কোনাে মামলার সঙ্গে জড়িত কোনাে পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিলের জন্য মৌখিকভাবে আবেদন করলেও হাইকোর্ট সেই আপিলের অনুমতি দিতে পারে।

[c] ফৌজদারি আপিল এলাকা: ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের রায় বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যেতে পারে, যদি- (1) কোনাে ফৌজদারি মামলায় নিম্নতম আদালতের রায়ে নির্দোষ বলে প্রমাণিত কোনাে ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে, (2) নিম্ন-আদালতে কোনাে ফৌজদারি মামলা চলাকালীন অবস্থায় হাইকোর্ট নিজের হাতে তুলে নেয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞা দান করে, অথবা (3) কোনাে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যদি নিজে থেকে প্রমাণপত্র (Certificate) প্রদান করে যে, মামলা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার যোগ্য। তবে শেষ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট-নির্ধারিত নিয়ম কানুন অনুযায়ী এবং হাইকোর্ট-নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী আপিলটি নিয়ন্ত্রিত হবে। ৪৪ তম সংবিধান-সংশােধনের (১৯৭৮ খ্রি.) মাধ্যমে ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আবেদনের পদ্ধতিকে অনেক সহজ করা হয়েছে। মামলার রায় প্রদানের সময় হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টে আবেদনের অনুমতি দিতে পারে।

বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে আপিল এলাকা:

সুপ্রিমকোর্টকে আপিলের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি প্রদানের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। এই অনুমতির মাধ্যমে সামরিক আদালত ছাড়া ভারতের বিচার ব্যবস্থার অন্তর্গত যে-কোনাে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। সুপ্রিম কোর্ট একমাত্র বিশেষ অবস্থাতেই যেখানে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের রীতি লঙ্ঘিত হয়— সেক্ষেত্রে এই ধরনের আপিলের বিশেষ অনুমতি দিয়ে থাকে।

পরিশেষে বলা যায়, সুপ্রিম কোর্টের এলাকা গুলির মধ্যে এই দুটি এলাকা যথা-মূল এলাকা ও আপিল এলাকা তাদের দায়িত্ব সম্পাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading