সেক্স এবং জেন্ডার- পার্থক্য (Sex and Gender- Differences )

সেক্স এবং জেন্ডার- দুটি শব্দকেই সাধারণভাবে আমরা লিঙ্গ বলে থাকি। আভিধানিকভাবেও জেন্ডার শব্দটির অর্থ লিঙ্গ। ব্যাকরণ পড়তে গিয়ে আমরা দেখেছি জেন্ডার শব্দটির প্রতিশব্দ করা হয়েছে লিঙ্গ, যেমন- পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, ক্লিবলিঙ্গ ও উভয়লিঙ্গ। জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যখন থেকে নড়াচড়া শুরু হয়, তখন প্রথমদিকে জেন্ডারকে লিঙ্গের প্রতিশব্দ বা ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হিসেবেই মনে করা হতো। লিঙ্গ শব্দটি দিয়ে যেভাবে জৈবিক বা শারীরিক প্রপঞ্চকে প্রকাশ করা হয়, তাতে এর সামাজিক দিকগুলো সুস্পষ্টভাবে বুঝায় না। তাই পরবর্তী সময়ে এই ধারণা থেকে সরে আসা হয়েছে। বর্তমানে সাহিত্য, আলোচনা বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জেন্ডার শব্দটি ভিন্ন ও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দুটো শব্দেরই আলাদা ও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সেক্স ও জেন্ডারের মধ্যে এই পার্থক্যের সূচনা কিন্তু নারীবাদীরা করেন নি; কিন্তু জৈবিক বা শারীরিক প্রপঞ্চের প্রকাশ থেকে ভিন্নতর প্রেক্ষাপট তুলে ধরার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম এই শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন, পরে নারীবাদীরা এটিকে অনুসরণ করেন।

সেক্স :

সেক্স হচ্ছে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈশিষ্টসূচক ভিন্নতা যা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। এটি শারীরবৃত্তীয়ভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়।

জেন্ডার :

জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষের সামাজিক পরিচয় যা একইসাথে সামাজিকভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও ভূমিকাকে নির্দেশ করে। এতে নারী ও পুরুষের সাথে সম্পর্কিত মনস্তাত্বিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বোধটি প্রাধান্য পায় বেশি। ফলে সমাজ, পরিবেশ ও স্থান বদলের সাথে সাথে জেন্ডার-ধারণা পরিবর্তিত হতে পারে।

পার্থক্য কোথায়?

অ্যান ওকলের মতে, সেক্স শারীরিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। আর জেন্ডার একটি নির্দিষ্ট সমাজে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ধারিত বিশিষ্টতা নির্দেশ করে।একজন নারী ও পুরুষের কার কী রকম পোশাক-পরিচ্ছদ হবে; কে কী রকম আচার-আচরণ করবে; আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কার কী রকম হবে; সমাজের নানা ধরনের কাজে একজন নারী বা একজন পুরুষের ভূমিকা কী হবে;মানসিক গঠনের দিক দিয়ে একজন নারী বা পুরুষ কী রকম হবে; সমাজ ও সংস্কৃতি নির্ধারিত এই বিষয়গুলোর ব্যাখ্যাদাতা হচ্ছে জেন্ডার।

উপর্যুক্ত বক্তব্য অনুযায়ী, সেক্স বিষয়টি পুরোপুরি শরীরের উপর নির্ভরশীল কিন্তু জেন্ডার নির্ভরশীল সমাজের উপর। যেহেতু নারী বা পুরুষের দায়িত্ব, কাজ ও আচরণ মোটামুটি সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই সমাজ পরিবর্তন বা সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে জেন্ডার ধারণা বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- আমরা যখন কাউকে ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করি, তখন সেখানে জৈব-লিঙ্গ নির্দেশ করাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাড়ায়। কিন্তু ‘মেয়েলি’ বা ‘পুরুষালি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে জেন্ডার প্রপঞ্চকে যুক্ত করা হয় যেখানে নারী বা পুরুষের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে স্বভাব-আচরণগত ইত্যাদি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। আর এ কারণে সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সামাজিক লিঙ্গ বলে অনেকে অভিহিত করেন।

মোট কথা সেক্সের সাথে সম্পর্কযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো শারীরিক বা জৈবিক, সর্বজনীন, অপরিবর্তনীয় এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট।

অন্যদিকে জেন্ডারের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্বিক; সমাজ ও সংস্কৃতিভেদে তা ভিন্ন হতে পারে এবং এটি পরিবর্তনীয়।

শ্রমবিভাজনেও সেক্স ও জেন্ডারের মধ্যকার পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট। নারী ও পুরুষ তার শারীরিক গঠনের কারণে যে কাজ বা ভূমিকা পালন করে, সেগুলোকে সেক্সভিত্তিক শ্রম বিভাজন বলা হয়। যেমন- বংশরক্ষায় নারী ডিম্বাণু সরবরাহ করে,শিশুকে স্তন পান করায়, অপরদিকে পুরুষ শুক্রাণু সরবরাহ করে। অন্যদিকে নারী ও পুরুষ সামাজিক বা সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও বিশ্বাসের কারণে সে কাজ বা ভূমিকা পালন করে সেগুলোকে বলা হয় জেন্ডারভিত্তিক শ্রম বিভাজন। যেমন- আমাদের দেশে সাধারণ ফেনোমেনা হচ্ছে নারী ঘরের ভিতরে কাজ করবে, পুরুষ কাজ করবে ঘরের বাইরে ইত্যাদি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading