তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসে নিতাই কবিয়ালের ব্যক্তিত্ববোধের গভীরতা ও জটিলতা ঔপন্যাসিকের পারদর্শিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিতাই একজন অন্ত্যজ পরিবারের সদস্য, তার জন্মগত পরিচয় এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। ঔপন্যাসিক এই চরিত্রটিকে শুধুমাত্র একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটের অংশ হিসেবে নয়, বরং একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
বৈশিষ্ট্য:
সামাজিক প্রেক্ষাপট: ঔপন্যাসিক নিতাইয়ের জন্মগত পরিচয় এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে সৃষ্ট জটিলতাগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি কিভাবে সমাজে অবহেলিত এবং বঞ্চিত, তার মধ্যে একটি স্বাভাবিক মানবিকতা খুঁজে বের করেছেন।
মানবিকতা: নিতাই একজন সাধারণ মানুষ, যার মধ্যে রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা। ঔপন্যাসিক তার মধ্যে এই মানবিকতাগুলো তুলে ধরেছেন।
বৈপ্লবিক চেতনা: নিতাই সমাজের প্রচলিত নিয়ম-কানুন এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায়। ঔপন্যাসিক তার মধ্যে এই বৈপ্লবিক চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন।
যুক্তি ও বুদ্ধি: নিতাই একজন বুদ্ধিমান এবং যুক্তিসম্পন্ন মানুষ। ঔপন্যাসিক তার মধ্যে এই গুণাবলীগুলো তুলে ধরেছেন।
আত্ম-পরিচয়: নিতাই তার নিজের পরিচয় এবং সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব অনুভব করে। ঔপন্যাসিক তার মধ্যে এই আত্ম-পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন।
অন্যান্য চরিত্রগুলির সাথে সম্পর্ক: নিতাই অন্যান্য চরিত্রগুলির সাথে তার সম্পর্ক, বিশেষ করে তারণ মণ্ডল, ঠাকুরঝি এবং রাজার সাথে তার সম্পর্কগুলো ঔপন্যাসিকের পারদর্শিতার প্রমাণ।
ভাষা ও শব্দ: ঔপন্যাসিক নিতাইয়ের চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য উপযুক্ত ভাষা এবং শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এই সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কবি’ উপন্যাসে নিতাই কবিয়ালের ব্যক্তিত্ববোধকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি নিতাইকে শুধু একটি সামাজিক চরিত্র হিসেবে নয়, বরং একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ঔপন্যাসিকের এই পারদর্শিতা ‘কবি’ উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে।