প্রাচীন উত্তরবঙ্গের বিলাসিতা ও অনৈতিকতার ওপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা  লেখো।

প্রাচীন উত্তরবঙ্গের বিলাসিতা ও অনৈতিকতা :

রামচরিত ও পবনদূতে রামাবতী ও বিজয়পুরের বর্ণনা এবং বানগড়, রামপাল, মহাস্থান দেওপাড়া প্রভৃতি স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে মনে হয়, সমৃদ্ধ নগরবাসীরা ইট-কাঠের তৈরি ক্ষুদ্র গৃহে বসবাস করতেন। রাজপ্রাসাদও তৈরি হত ইট-কাঠের গ্রামে ইট-কাঠের বাড়ি খুব একটা ছিল না। দরিদ্র নিম্নকোটির লোকেরা তো পার্টেই এমনকি বিত্তসম্পন্ন মহত্তর গৃহস্থরাও সাধারণত মাটি, খড়, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদির তৈরি বাড়তে বসবাস করতেন। গৃহের ছাদ সাধারণত তৃণ দ্বারা আচ্ছাদিত। গৃহের প্রাচার ও সাঙ্গাণ ছিল গোময়লিপ্ত। ধনী লোকেরা ইষ্টক-নির্মিত গৃহে বসবাস করতেন। একান্ত গরিব গৃহস্থ ও সমাজ শ্রমিকেরা কুঁড়েঘরে বাস করতেন। চণ্ডাল, নট ও মাংস বিক্রেতাগণ নগরের বহির্ভাগে বাস করতেন। সমৃদ্ধ বিত্তবান লোকেরা সোনা ও রুপার তৈরি থালা-বাসন ব্যবহার করত। কিন্তু গ্রামবাসী সাধারণ গৃহস্থরা কাঁসার এবং দরিদ্র লোকেরা সাধারণত মাটির ভোজন ও পানপাত্র ব্যবহার অভ্যস্থ ছিল। বস্ত্র পরিধানের মধ্যে পুরুষেরা ধুতি এবং মেয়েরা শাড়ি পড়ত। ধুতি ও শাড়িই ছিল প্রাচীন বাঙ্গালির সাধারণ পরিধেয়। দরিদ্র ও সাধারণ ভদ্র গৃহস্থ নারীদের এক বস্ত্র পরাটাই ছিল রীতি। কামসূত্র এবং পবনদূতে কামুক কার্যকলাপারে স্পষ্ট বর্ণনা গৌড়ের যুবক-যুবতীদের নৈতিক শিথিলতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। স্মৃতিকার বৃহস্পতি দুটি কারণে বাঙালি দ্বিজবর্ণের লোকদের নিন্দা করেছেন-এক তাদের মাংস ভক্ষণ এবং দ্বিতীয় তাদের সমাজের নারীরা দুর্নীতিপরায়ণা। ধোয়ীর পবনদূতেও দেখা যায় কামচরিতার্থতার অবাধলীলা। পবনদূত ও রামচরিত উভয় কাব্যেই সভানন্দিনীদের উচ্চসিত সুতিগান এবং তাদের বিলাসলীলা বর্ণনা করা হয়েছে। সন্দেহ নেই রাজসভায় এবং বিত্তবান সমাজে এই নন্দিনীদের বিশেষ একটা স্থান ছিল। এ ছাড়া নগরে ও গ্রামে বিত্তবানদের ঘরে দাসী রাখার প্রথা যে প্রায় সর্বব্যাপী ছিল তা জীমূতবাহনের ‘দায়ভাগ’ গ্রন্থে জানা যায়। দেবদাসী প্রথাও প্রচলিত ছিল। পুণ্ড্রবর্ধনের কোনো একটি মন্দিরের প্রধান দেবদাসী ছিলেন কমলা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading