প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্যপ্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য
গুলি নীচে আলোচনা করা হল-
প্রাচীন প্রস্তর যুগ:
প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে মূলত প্লেইস্টোসিন যুগের সভ্যতাকে বোঝায়। নব্যপ্রস্তর যুগ ছিল হলসিন যুগের সভ্যতা। এই প্রথায় উভয় যুগের মানুষই পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত, তবে গঠনগত ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য ছিল। প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষের তৈরি হাতিয়ার অতটা মজবুত ছিল না। এই সময় হাত-কুঠার, চাঁছনি: এ ছাড়াও ধারালো ব্লেড, বাটালি প্রভৃতি ছিল মানুষের তৈরি হাতিয়ার। এই যুগে একই ধরনের হাতিয়ার দিয়ে বিভিন্ন কাজ করা হত। হাতিয়ারের সংখ্যাও ছিল কম। এই যুগের হাতিয়ারগুলি সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয় খাদ্য সংগ্রহ ও আত্মরক্ষার জন্য।
প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। গাছের ফলমূল সংগ্রহ এবং পশুশিকার
ছিল তাদের খাদ্যের উৎস। খাদ্য সংগ্রাহক মানুষকে খাদ্যের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অপর এক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত। এ যুগের মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করত। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ভয় পেয়ে, সর্বপ্রথম তারা গুহায় আশ্রয় নেয়। গাছের ডালপালা, পশুর হাড়গোড় প্রভৃতি দিয়ে তারা আচ্ছাদন বানিয়ে বসবাস শুরু করে। গাছের ছাল ও পশুর চামড়া তারা বস্তু হিসেবে ব্যবহার করত। তারা পায়ে হেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করত। এই সময় মানুষ শিল্পকলার কিছুটা দক্ষতা দেখিয়েছিল। শিল্পকলা বলতে গুহাচিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়। গুহাচিত্রের বিষয় ছিল পশুর প্রতিকৃতি, শিকারের দৃশ্য প্রভৃতি।
নব্যপ্রস্তর যুগ:
নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। এই যুগের হাতিয়ার ছিল কাস্তে, নিড়ানি, ছুঁচ, হারপুন, বর্শাফলক, তিরফলক প্রভৃতি। মানুষ এই সময় প্রচুর পরিমাণে হাতিয়ার তৈরি করে। প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ ছিল শিকারি বা খাদ্য সংগ্রহকারী, কিন্তু নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্য উৎপাদনকারী। নব্যপ্রস্তর যুগে জীবিকা হিসেবে কৃষি ও পশুপালন আরও বেশি অগ্রসর হয়েছিল। এই যুগে মানুষ জমি চাষ করে ও শস্য উৎপাদন করতে শুরু করে। পাথরের ফালায় মাটি খুঁড়ে বীজ বপন করে ধান, গম, বার্লি, যব ও ডাল উৎপন্ন করে। এ যুগে তুলোর চাষও শুরু হয়, ফলে মানুষ কাপড় বুনতে শেখে। নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধভাবে নদী বা জলাশয়ের ধারে বসতি স্থাপন করে। এই যুগে চাকার ব্যবহার শুরু হলে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালির কার্যে ব্যবহারের জন্য মৃৎপাত্রেরও ব্যবহার শুরু হয়। পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে মানুষ জলপথে নৌকা ও ভেলার ব্যবহার করত। স্থলপথে ষাঁড়, উট প্রভৃতি প্রাণীকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই সময় গুহাচিত্রে রঙের ব্যবহার দেখা দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে দেবীমূর্তি গড়া ও পোড়ামাটির বস্তু নির্মাণ শুরু হয়। যাই হোক, প্রাচীন প্রস্তর যুগকে ছাড়িয়ে নব্যপ্রস্তর যুগ যে অনেকটাই সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছিল তা বলতে দ্বিধা নেই।