নারীচেতনাবাদ বা ফেমিনিজম হলো সেই দৃষ্টিভঙ্গি যা নারীর অধিকার, মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং সমানাধিকারের পক্ষে কথা বলে। বাংলা কথাসাহিত্যে নারীচেতনাবাদী চিন্তাধারা প্রায়শই প্রতিফলিত হয়েছে, বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর লেখকদের রচনায়। এ ধরনের সাহিত্য নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর জীবনের সংগ্রাম এবং তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলোকে তুলে ধরে।
দৃষ্টান্ত: আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রতিশ্রুতি
আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রতিশ্রুতি উপন্যাসটি নারীচেতনাবাদের একটি শক্তিশালী উদাহরণ। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সত্যবতী, একজন সাধারণ গ্রামের মেয়ে, যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতিনীতি এবং শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে নিজের অধিকার এবং স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন।
সত্যবতীর চরিত্রের মাধ্যমে আশাপূর্ণা দেবী দেখিয়েছেন কিভাবে নারীরা যুগ যুগ ধরে সামাজিক শৃঙ্খলায় বাঁধা পড়ে আছেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা কখনও ম্লান হয়নি। সত্যবতীর সাহস এবং দৃঢ় মনোবল নারীচেতনাবাদী ধারণার প্রতিফলন। তিনি বিবাহ, মাতৃত্ব, এবং সামাজিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকেও নিজের স্বাধীন চিন্তা এবং ইচ্ছার জন্য সংগ্রাম করেছেন।
এই উপন্যাসে নারীচেতনাবাদের মূল বিষয়গুলো যেমন নারীর স্বাধীনতা, সামাজিক এবং পারিবারিক শৃঙ্খলা ভাঙার প্রয়াস, এবং নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে। আশাপূর্ণা দেবীর রচনায় নারীচেতনাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট, যা বাংলা সাহিত্যে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে নতুন আলোচনার পথ খুলে দেয়।
উপসংহার
বাংলা কথাসাহিত্য, বিশেষত আশাপূর্ণা দেবীর মতো লেখকদের রচনায় নারীচেতনাবাদ শক্তিশালীভাবে উপস্থিত। তাঁদের রচনা নারীচেতনাবাদী চিন্তার উদাহরণ হয়ে সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।