বিশেষ শিক্ষাগত চাহিদা বলতে কি বোঝায়?
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু (Children with special needs) বলতে সেই ধরনের শিশুদের বোঝায়, যারা যে-কোনো দিক থেকে স্বাভাবিক শিশুদের থেকে পৃথক। সাধারণত এই শিশুরা গড়মান (Average Range) থেকে অনেক উচ্চমানের বা নিম্নমানের হয়ে থাকে। কাজেই শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। তবে, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতা থাকলেই হবে না, সেই প্রতিবন্ধকতার মাত্রা যদি এমন পর্যায়ে হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে তবেই তাকে শিক্ষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হয়ে থাকে। যেমন কোনো শিশু হয়তো কানে কম শুনতে পায়। তবে এই ‘কম শুনতে পাওয়া? যতক্ষণ পর্যন্ত না তার শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে ততক্ষন তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা যাবে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, তার এই ‘কম শুনতে পাওয়া শ্রেণিকক্ষের অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তার শিক্ষাগত অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে, এখনই তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হয়।
মনস্তত্ববিদ Barbe যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণভাবে ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’ কথাটি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বলতে সেই সমস্ত শিশুদেরকেই বোঝায় যারা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন এবং তাদের এই ভিন্নতার কারণেই তাদের জন্য বিদ্যালয়ে বিশেষ শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রতিটি শিশুই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। কারণ, আকৃতি ও প্রকৃতিগত দিক থেকে প্রতিটি শিশুই অদ্বিতীয়। কোনোভাবেই
দুটি শিশুর মধ্যে হুবহু একরকম সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এই বৈসাদৃশ্য থাকলেই কোনো শিশুকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা যাবে না। যদি এই বৈসাদৃশ্যের মাত্রার গভীরতা সামগ্রিক জীবনযাত্রার জার তবে তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হয়। ক্ষেত্রে তাকে বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন করে তবে তাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হয়।
যে সকল শিশুর ইন্দ্রিয় ক্ষমতা অর্থাৎ বৃদ্ধি বা শারীরিক ক্ষমতা এতটাই ভিন্ন যে কারণে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষা বা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন
হয়, সেইসব শিশকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায়, সমবয়স্কদের তুলনায় যাদের বুদ্ধি সংবেদন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাব বিনিময় ক্ষমতা ও সামাজিক দকতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম বা বেশি হয়। অর্থাৎ মারা সাধারণের বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। বুদ্ধাঙ্কের দিক বলা যায় যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 75-এর নীচে এবং 120-র উপরে তারাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু।
শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় SEN শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ICT ব্যবহার:
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাগত চাহিদা একেবারে ভিন্ন। একদিকে যেমন তাদের ভিন্ন গোষ্ঠীসম্পন্ন পারিপার্শ্বিক জগৎ সমাজ সম্পর্কে আন দরকার। অন্যদিকে তেমন অন্যদিকে তেমন শিক্ষাগ্রহণে কার্যগত বাধার জন্য অন্যরকম মাধ্যমের প্রয়োজন।
এই ক্ষেত্রে তথ্য সংযোগসাধন প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষণ-শিখনে তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণ হল গুণমানের উন্নয়ন ঘটানো, পাঠক্রমিক পরিবর্তনকে সহায়তা করা এবং অক্ষম শিক্ষার্থীদের কিছু ধারণা দান। ICT-কে ব্যবহারের কতকগুলি রূপ হল-
• Compensation Uses: শিক্ষার্থীরা যাতে সংযোগসাধন ও। যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে সংযোগসাধন প্রযুক্তি সেক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় যে তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে, তাদের অভিজ্ঞতাগুলি বাছাই করতে, সমস্যাসমাধান করতে, তথ্যকে সহজলভ্য করতে, নিজের পারিপার্শ্বিক ও জগৎ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে।
• Didactive Uses: বিভিন্ন চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রেক্ষিতে শিক্ষায় তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন শিক্ষণপদ্ধতি ও বিচার ক্ষমতা এনেছে, তাই তথ্য ও সংযোগসাধন পদ্ধতির একটি গুরুত্ব বর্তমান, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার কথা বলে। ব্যক্তিগত বিকাশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিতে শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা, বিশেষ চাহিদা, পার্থক্য, সক্ষমতা প্রভৃতি লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। তারা যাতে যথার্থভাবে শিক্ষা নেয় তার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন প্রয়োজন।
• Communication Uses: যে শিশুদের বিশেষ সমস্যা আছে প্রযুক্তি তাদের সঙ্গে সমাজের সংযোগের মধ্যস্থতা করে। বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার, যার সাহায্যে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পাঠদান করা যায়। সহযোগী যন্ত্র ও নানারকম সফ্টওয়্যারও আছে। শিক্ষকরা প্রয়োজনমতো এগুলি ব্যবহার করেন। কম্পিউটার তাদের সহযোগী হিসেবে থাকতে পারে অথবা সংযোগসাধন করতে পারে। যাদের সঞ্চালন ও সংযোগসাধনে সমস্যা থাকে কম্পিউটার তাদের নানাভাবে সাহায্য করে। তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সমধর্মী গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ শিশুদের জন্য তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ শিশুদের পাঠক্রমে তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি এবং এই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি সম্ভবপর হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য শিক্ষণ ও শিখনের উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। যথাযথ তথ্য ও সংযোগ প্রযুক্তি যাহারের মাধ্যমে সফলভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার থেকে তথ্য ও সংযোগসাধন প্রযুক্তি যেসব শিক্ষামূলক সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করে তা উল্লেখ করা হল-
• শিশুর বিকাশের (অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা) প্রাথমিক স্তরগুলির নির্ধারণ।
• নতুন দক্ষতা সৃষ্টি বা বর্তমান দক্ষতাগুলির সংস্কার দ্বারা ব্যক্তিগত বিকাশে সহায়তা করা তথ্যসংগ্রহের ক্ষমতার সংস্কার।
• সংযোগসাধন ও কার্যক্রমগত সহায়তাদানের মাধ্যমে ভৌগোলিক ও সামাজিক বাধা অতিক্রম করা।
• তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো স্থানের ধারণা সম্পর্কে সচেতনতার বিকাশ সম্ভব।
এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে এটি বিবেচনা করা প্রয়োজন যে ICT এককভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এর পরবর্তী ধাপে শিক্ষকদের দায়িত্ব থাকবে বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তনের জন্য তারা নতুন ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতির উল্লবন ঘটাবেন এবং এর মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাবেন। যদি একজন শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট কাজ কোনো শারীরিক বা ইন্দ্রিয়গত বাধার জন্য যথার্থভাবে করতে সক্ষম না হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প কৌশলের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সে প্রয়োজনীয় তথ্যলাভ করে এবং ফলাফল জানাতে পারে। এই বিষয়টির জন্য বিশেষ শিক্ষার পাঠক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন। পাঠক্রমের সংস্কার যেমন নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে হবে না বরং এটি নির্দিষ্ট একটি কোর্সের উপযোগী দক্ষতা ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটাবে এবং এর পন্থা হবে অত্যন্ত সৃজনাত্মক এবং এই সব শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত হবে।
বর্তমান প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যুগে বিভিন্ন তথ্য আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে খুব সহজেই যথাযথ দ্রুত ও নমনীয়ভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগসাধন ও শিখনের জন্য বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে ইমেল, বুলেটিন বোর্ড, হোয়াইট বোর্ড, চার্টরুম, ভিডিয়ো কনফারেন্সিং, টেলিযোগাযোগ, সংযোগসাধনমূলক উপাদান, যেমন-সিমুলেশন গেমস, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, যেমন-স্ব-মূল্যায়ন, বছর থেকে নির্বাচন পরীক্ষা প্রভৃতি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে, যেমন- ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু, বহুধামাধ্যম, ডিজিটাল অডিয়ো এবং ভিডিয়ো, অ্যানিমেশন ও কাল্পনিক পরিবেশ ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে শিক্ষামূলক বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ও বিভিন্ন উপকরণের সাহায্যে বিষয়বস্তু নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় নানা বিকল্প উপায়ে তথ্যসংগ্রহের সম্বল দিচ্ছে। এর ফলে শিক্ষক এই সমস্ত তথ্য ও শিক্ষার্থীর মাঝে সহায়ককারীর ভূমিকা পালন করছেন। প্রাচীন ক্রমোচ্চমান বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন ঘটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মূল দিকগুলি থেকে শিক্ষকের বিচ্ছিন্নতাকে কাটিয়ে তুলেছে |