মালাধর বসু গুণরাজ খাঁ মধ্যযুগীয় বাঙালি কবি। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীর একজন কবি। তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় ভাগবত পুরাণ বা ভাগবত অনুবাদ করেন। তার অনূদিত কাব্যটির নাম শ্রীকৃষ্ণবিজয়।
১৪৭৩ সালে তিনি ভাগবত পুরাণের বিষয়বস্তু অবলম্বনে শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য রচনা শুরু করেন। কাব্য রচনার শেষ হয় ১৪৮০ সালে। এই কাব্যের অপর নাম ছিল গোবিন্দমঙ্গল। শ্রীকৃষ্ণবিজয় রচনা করে তিনি গৌড়ের সুলতানের কাছ থেকে গুণরাজ খাঁ উপাধি পান।
মালাধর বসুর কবিত্ব :
মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যে কবিত্ব ও শিল্প চাতুর্যের থেকে অনুবাদকের পরিচয় পরিস্ফুট হয়েছিল। কবিত্বময় বর্ণনা কিংবা শিল্পচাতুর্যময় প্রকাশ অত্যন্ত দুলর্ভ, সহজ, সরল, নিরলঙ্কিত ভাষায় কৃষ্ণের ঐশী শক্তির বর্ণনা ছিল তাঁর মুখ্য পরিকল্পনায়।
শ্রীকৃষ্ণবিজয়ের ভক্তিরস :
ভক্তিরস তেমনভাবে এখানে পরিস্ফুট হয়নি। মূলত কৃষ্ণের ঈশ্বর সত্তার শক্তি প্রাচুর্যের বিজয় গাথা রচনা করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর সমকালীন যুগ বাসনার চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণবিজয়ের ভাষা :
শ্রীকৃষ্ণবিজয়ের ভাষা সহজ, সরল নিরলংকৃত। আসলে যুগধর্মের চাহিদা পুরণের জন্য মালাধর কৃষ্ণের সহজ সরল জীবনকাব্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ফলে তাঁর কাব্য অচিরেই কৃষ্ণলীলা প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
সর্বোপরি বলতে হয়, মালাধর বসু বিরচিত ও শ্রীচৈতন্য প্রশংসিত ‘শ্ৰীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যে বাংলাদেশের জন জীবনে কৃষ্ণ কাহিনি প্রচারের প্রথম ও প্রধান কাব্যগ্রন্থ। মালাধরের কৃষ্ণ নিষ্ঠা এবং তাঁর কাব্যের রস পরিণাম বাঙালির অন্তর্লোকে যে কৃষ্ণভক্তির ঐশ্বর্য সঞ্চারিত করেছিল পরেরকালে সেই ঐশ্বর্য দিয়ে—’বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া’ নিমাই কায়া পরিগ্রহ করেন।