মধুসূদন দত্তের অন্যতম কাব্য ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬২)। বাংলা পত্রকাব্যের ইতিহাসে প্রথম পথের দিশারি ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। উনিশ শতকের পটভূমিকায় পুরাণের নারীদের কীভাবে আধুনিক যুগের পটভূমিকায় উপস্থাপন করা যায় তা মধুসুদন দেখিয়েছেন এই কাব্যে। উনিশ শতকের নারীচেতনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন বিদ্যাসাগরকে এই কাব্য উৎসর্গ করে। এগারোটি পত্রে পুরাণের নারীরা সকলেই প্রতিবাদের সুর শুনিয়ে গেছেন। কেউ প্রেমে, কেউ প্রতিবাদে, কেউ অধিকার প্রতিষ্ঠায়, কেউ ন্যায়ধর্ম সঞ্চারে শকুন্তলা, দ্রৌপদী, জনা, তারা, কৈকেয়ী প্রত্যেকেই স্বতন্ত্রতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘বীরাঙ্গনা’ অর্থাৎ বীর যে অঙ্গনা বা বীর যে নারী। এইসব নারীরা কেউ-ই যুদ্ধে যায়নি, প্রত্যেকেই গৃহে থেকে নিজের মতো করে প্রতিবাদ করেছে। কেবল শকুন্তলা অরণ্যচারী। এখানে পুরাণের নারীদের আর নীতি-নিয়ম নেই, প্রত্যেকেই নারীর নিজস্ব অভিব্যক্তি নিয়ে মত প্রকাশ করেছে। যেমন কৈকেয়ী ঘোষণা করেছে-“যেখানে যাব কহিব সেখানে/ পরম অধর্মচারী রঘুকুলপতি। সে চলে যাচ্ছে রাজ্য ত্যাগ করে। যেখানে রাজা নিজের নিয়ম রক্ষা করে না সেখানে কৈকেয়ীর থাকার প্রয়োজন উপলব্ধি করেনি। আবার তারা নিজের প্রেমের কথা সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে ঘোষণা করেছে। তেমনি জনা জানিয়ে দিয়েছে স্বামীর অন্যায় ধর্ম। বিষয়বস্তু, ভাষার লালিত্য ও কাব্যসুষমায় ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য। সংগতভাবেই বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন-“কবিত্বশক্তির দিক দিয়ে বিচার করিলে মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ উৎকৃষ্ট; কিন্তু ভাষার লালিত্যে ও ছন্দের পারিপাট্যে মধুকবির বীরাঙ্গনা সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা।”