গল্পের নাম :- মানবিকতার জয়
শীতের রাত। পুবের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ঝলমল করছে। গ্রামটির নাম সরোজপুর। চারদিকে নীরবতা, শুধু মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে কিছু পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। সেই নীরব রাতে গ্রামের এক প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট কুঁড়েঘরে এক বৃদ্ধা একা বসে আছেন। নাম তার রমা দিদি।
রমা দিদি গ্রামে সকলের প্রিয়। তিনি সবার বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ান। তাঁর ভালোবাসা আর মমত্ববোধের কোনো তুলনা নেই। তবে আজ রমা দিদি নিজেই অসুস্থ। তার চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ, শরীরে বল নেই। গ্রামের মানুষেরা জানেন, কিন্তু কেউই কিছু করতে পারছে না।
এই সময় গ্রামের এক কিশোর, নাম তার রাহুল, তার মায়ের কাছ থেকে শুনতে পায় রমা দিদির অসুস্থতার কথা। রাহুল খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে ভাবে, “রমা দিদি সবসময় আমাদের জন্য করেছেন, এখন তার জন্য কিছু করা উচিত।”
রাহুল দ্রুত তার কয়েকজন বন্ধুকে খবর দেয়। সঞ্জয়, মিতা, এবং রোহিত সবাই এসে জড়ো হয়। তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, রমা দিদির জন্য কিছু করতে হবে। কিন্তু কী করবে, তা নিয়ে তারা ভাবনায় পড়ে যায়।
হঠাৎ রাহুলের মনে পড়ে, গ্রামের পাশেই একজন বিখ্যাত ডাক্তার আছেন, ডা. সেন। যদিও তিনি সাধারণত গ্রামের লোকদের চিকিৎসা করেন না, তবুও রাহুল সিদ্ধান্ত নেয় তার সাথে কথা বলবে। সে তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে ডা. সেনের বাড়ি যায়।
ডা. সেন প্রথমে একটু বিরক্ত হন। কিন্তু রাহুলের আবেগপূর্ণ কথা শুনে তার মন গলে যায়। তিনি বলেন, “তোমরা যে এতটা মানবিক, তা দেখে আমি মুগ্ধ। চলো, আমি রমা দিদির কাছে যাব।”
ডা. সেন রমা দিদির বাড়িতে আসেন এবং তাকে পরীক্ষা করেন। তিনি কিছু ওষুধ দেন এবং বলেন, “তোমরা তাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করো, ওষুধগুলো ঠিকমতো দাও। রমা দিদি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
গ্রামের মানুষ এই খবর শুনে খুশি হয়। তারা সবাই মিলে রমা দিদির যত্ন নিতে শুরু করে। সবাই মিলে তার খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে থাকে।
কিছুদিনের মধ্যে রমা দিদি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি যখন জানতে পারেন যে রাহুল এবং তার বন্ধুরা ডা. সেনকে নিয়ে এসেছিল এবং গ্রামের সবাই তার যত্ন নিয়েছে, তখন তার চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, “তোমাদের মানবিকতা আমার জীবনের সেরা উপহার।”
গ্রামের মানুষ এই ঘটনার পর থেকে আরও বেশি সংহতি এবং সহমর্মিতা দেখাতে শুরু করে। রমা দিদির গল্প তাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবিকতা আর সহানুভূতির মাধ্যমে জীবনের সমস্ত কষ্টকেই পরাজিত করা সম্ভব।
এই গল্পের মাধ্যমে বোঝা যায়, মানবিক মহত্ত্ব এবং সহানুভূতি মানুষের মধ্যে একতা সৃষ্টি করতে পারে এবং সব সমস্যার সমাধান করতে পারে।