মূল্যায়ন কাকে বলে? মূল্যায়ন কয় প্রকার ও কি কি? নির্ণায়ক অভীক্ষা কাকে বলে? নির্ণায়ক অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি লিখুন। নির্ণায়ক অভীক্ষা ও পারদর্শিতার অভীক্ষার পার্থক্য লিখুন।

মূল্যায়ন কাকে বলে?

মূল্যায়ন শব্দটির সাধারণ অর্থ হল ‘মূল্য আরোপ করার কাজ’ (The work or process to amount of)। শিক্ষাবিদ Wesly মূল্যায়নের অর্থ বোঝাতে গিয়ে বলেছেন-“Evaluation is a total and final estimate.”

শিক্ষাবিদ ওয়েসলে (Wesly) বলেছেন-“শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য ব্যক্তি জীবনের দৈহিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক,

নৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন দিকের বিকাশের প্রক্রিয়া সতত সক্রিয়, তার সু-সামঞ্জস্য রূপ ব্যক্তিজীবনে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে তার পরিমাপক হল মূল্যায়ন।”

মুদালিয়র কমিশন-এর মতে, পুথিগত পারদর্শিতা নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত দিকগুলিতে শিক্ষার্থীর মনোভাব, আগ্রহ, আদর্শ চিন্তার রূপ, স্বাস্থ্য ও

কাজের অভ্যাস এবং সামাজিক অভিযোজন ক্ষমতা পরিমাপক ব্যবস্থা হল মূল্যায়ন। কোঠারি কমিশনে (1964-1966 খ্রিস্টাব্দে) মূল্যায়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে- “Evaluation is a continuous process, forms an integral part of the total system of education and is intimately related to our educational objectives. It exercise a great influence on the pupils study habit and the teachers methods of instruction and thus helps not on only to measure educational achievement but also to improve it.”

মূল্যায়ন কয় প্রকার ও কি কি?

মূল্যায়নের প্রকারভেদ: মূল্যায়ন শিক্ষাদানকালেই করা হয়। আবার শিক্ষাদান সমাপ্ত (নির্দিষ্ট একক, উপএকক সমাপ্তির পর) হবার পর মূল্যায়ন করা হয়। এইজন্য মূল্যায়নকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (১) প্রস্তুতকালীন মূল্যায়ন ও (২) সামগ্রিক মূল্যায়ন।

কোনো কাজ চলাকালীন (এখানে শ্রেণিতে শিক্ষাদানকালে) কার্যের নীতি, উৎকর্ষতা ও অগ্রগতি প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিচার করে যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে For- mative মূল্যায়ন বলে। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহে Formative মূল্যায়ন করা হয়। প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়নে পাঁচটি সূচক: প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন সম্পন্ন করার জন্য পাঁচটি। সূচকের (Indicator) কথা বলা হয়েছে। এই সূচকগুলি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাকাই এই পাঁচটি সূচক হল-

(ক) অংশগ্রহণ

(খ) প্রশ্ন করা ও অনুসন্ধান

(ঘ) সমানুভূতি ও সহযোগিতা

(গ) ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের সামর্থ্য

(৬) নান্দনিকতা ও সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ

নির্ণায়ক অভীক্ষা কাকে বলে?

নির্ণায়ক অভীক্ষা: শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে দুর্বল আবার কোনো শিক্ষার্থী সেই বিষয়ে সবল হয়-এটা নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে
বলে Diagnosis বা নির্ণায়ক আর সবল ও দুর্বল নির্ণয় করার জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাকে বলে নির্ণায়ক অভীক্ষা। কোনো কাজ সফলতার সঙ্গে করার জন্য যে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এবং শিক্ষার্থীরা যেসব সাধারণ ভুল করে তাকে ভিত্তি করে রে অভীক্ষা প্রস্তুত হয় তাকে নির্ণায়ক অভীক্ষা বা Diagnostic Test বলে।

নির্ণায়ক অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য:

নির্ণায়ক অভীক্ষার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলি হল-
(a) নির্ণায়ক অভীক্ষার পদগুলির কাঠিন্যমাত্রা কম থাকে।
(b) শিক্ষার্থীর যে দক্ষতাটি পরিমাপ করা হচ্ছে তার সবগুলি প্রদর্শন করার সুযোগ সৃষ্টি করে তার ভ্রান্তির দিকগুলিও নির্দিষ্ট করে।
(c) নির্ণায়ক অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার স্থানগুলি নির্দিষ্ট করার জন্যই ব্যবহৃত হয়।
(d) নির্ণায়ক অভীক্ষায় সামগ্রিক স্কোরের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
(c) শিক্ষার্থীর কোথায় এবং কী ধরনের দুর্বলতা আছে তা নির্ণয় করার জন্য Diagnostic test করা হয়, সেই মতো সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

নির্ণায়ক অভীক্ষা ও পারদর্শিতার অভীক্ষার-এর মধ্যে পার্থক্য:

Screenshot 2024 08 08 090440

নির্ণায়ক অভীক্ষার উদাহরণ:

নির্ণায়ক অভীক্ষার সাহায্য বিষয়ে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা ও সবলতা নির্ণয় করা হয়। প্রথম ভাষা (মাতৃভাষা), দ্বিতীয় ভাষা, পরিবেশ বিজ্ঞান, এবং গণিত-চারটি বিষয় শ্রেণিতে পাঠদানের পূর্বে শিক্ষকের যা করা উচিত তা হল শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর ওই বিষয়গুলি সম্পর্কে কার কার কী কী দুর্বলতা আছে তা নির্ণয় করে সেইমতো পাঠদানের ব্যবস্থা করা। তাহলে পাঠদান সঠিক হবে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে উন্নত স্তরে পৌঁছাতে পারবে। এর জন্য যা প্রয়োজন তা হল অভীক্ষা প্রস্তুত করা।

মাতৃভাষার (বাংলা) অভীক্ষাপত্র:

মাতৃভাষার নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রস্তুতির পূর্বে শিক্ষককে ঠিক করে নিতে হবে কোন্ কোন্ বিষয়গুলি তিনি test করবেন। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তাহল (৫) পঠনঘটিত দুর্বলতা নির্ণয়। (৮) অক্ষর সম্পর্কিত দুর্বলতা নির্ণয়। (c) শব্দমালার দুর্বলতা নির্ণয়, (৫) বাক্য গঠন
দুর্বলতা নির্ণয়। (৫) শব্দের বিভিন্ন অংশ পড়া, শব্দের পার্থক্য নির্ণয়, শব্দের উচ্চারণ বোঝা ইত্যাদি। (1) শ্রবণমূলক প্রত্যক্ষণ এবং বানান সংক্রান্ত দুর্বলতা নির্ণয়। (g) হাতের লেখার দুর্বলতা নির্ণয়।

নীচের অংশটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তরে গোল দাগ দাও:

আমি সকালে দেরি করে উঠেছি আর তাই তাড়ায় ছিলাম। বাবা খুব তাড়া দিচ্ছিলেন। মা-বাবা আজ পিকনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। মা দারুণ স্বাদের খাবার বানিয়েছিলেন। আমরা ফুটবল আর অন্য অনেক খেলা খেলেছি। আমরা খুব মজা পেয়েছি। মাঠে তৃণ ছিল খুব সবুজ। প্রশ্ন:
(ক) শিক্ষক-শিক্ষিকা শ্রেণির সকলকে উপরের গদ্যাংশটি পড়তে বলবেন। তারপর স্কোর সিট পূরণ করবেন।
(খ) আমি সকালে দেরি করে উঠেছি। এই বাক্যে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ চিহ্নিত করো।
স্বরবর্ণ- ব্যঞ্জনবর্ণ-
(গ) এলোমেলো অক্ষরগুলি সাজিয়ে শব্দ তৈরি করো:
নিকপিক- টফুলব-
(ঘ) তৃণ শব্দের অর্থ কী? শিতে প্রানত্মীয়। তাড়া শব্দের অর্থ কী?
(ঙ) আমি পড়ছি তোমরা শোনো। বাবা খুব তাড়া দিচ্ছিল। আমরা ফুটবল আর অন্য অনেক খেলা খেলেছি। শিক্ষক-শিক্ষিকার যদি মনে হয় কেউ কম শুনতে পাচ্ছে তবে তার নামের পাশে মার্কিং করবেন।
(চ) গদ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষার্থীদের লিখতে দেবেন দেখে দেখে। এর পর তিনি তা দেখবেন। যাদের হাতের লেখা বোঝা যাচ্ছে না-তাদের চিহ্নিত করবেন।

Screenshot 2024 08 08 090723
bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading