রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাসের বটু চরিত্রটির পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘চার অধ্যায়’-এ বটু চরিত্রটি একজন কৌতূহলপ্রবণ এবং প্রতিবাদী যুবক। বটু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য, যে তার আদর্শের জন্য জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত। তিনি তরুণ, উদ্যমী, এবং গভীরভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী। তবে বটুর আদর্শবাদ একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবদ্ধ, যা তাকে পরিণতিতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
বটু রাজনৈতিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তার সংগ্রাম নিছক আদর্শের চেয়ে বেশি কিছুতে পরিণত হয়। সে বিশ্বাস করে, দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা হলো সর্বোচ্চ কর্তব্য। এই কারণে, বটু অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তার নেতা ইন্দ্রনাথের আদেশ পালন করে এবং নিজেদের মতাদর্শের বিরোধীদের ওপর কঠোর হয়ে ওঠে। তার এই একমুখী সংকল্পের কারণে মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্মতা এবং জীবনের জটিলতাগুলি তার চোখ এড়িয়ে যায়।
বটুর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তার একরৈখিক চিন্তাধারা, যা তাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এলা, যিনি নিজের মধ্যে এক দ্বন্দ্ব বহন করছেন, বটুর মতোই মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তাড়িত, কিন্তু তার চেতনায় বটুর মতো সোজাসাপটা সরলীকরণ নেই। বটু তার ভাবনা ও আদর্শের বাইরে কিছু দেখেন না, যা শেষমেশ তার সর্বনাশের কারণ হয়। তার দৃঢ়তা ও অন্ধবিশ্বাস তাকে এক কঠোর পথের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে মানবিকতার চেয়ে আদর্শিক কঠোরতা বড় হয়ে ওঠে।
বটু চরিত্রটি উপন্যাসে এক ধরনের ত্যাগের প্রতীক হলেও, তার সেই ত্যাগ অন্ধ এবং আত্মঘাতী। রবীন্দ্রনাথের লেখা এই উপন্যাসটি মানবতা, আদর্শ, এবং ব্যক্তির দায়িত্ববোধের মধ্যে এক জটিল দ্বন্দ্ব তুলে ধরে। বটুর চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ এক গভীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন—আদর্শ যদি মানবিকতাকে অতিক্রম করে যায়, তবে সেই আদর্শের মূল্য কতটুকু?