লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

Table of Contents

অথবা, ভারতের পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক:

ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। এর উচ্চকক্ষ হল রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ হল লোকসভা। উভয়ের কার্যকাল, গঠন, যোগ্যতা ও ক্ষমতাগত দিক থেকে যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

[1] গঠনগত পার্থক্য:

রাজ্যসভার তুলনায় লোকসভার সদস্য দ্বিগুণ। দ্বিতীয়কক রাজ্যসভা গঠিত হয় 250 জন সদস্য নিয়ে। এদের মধ্যে অঙ্গরাজ্যগুলি ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে 238 জন সদস্য নির্বাচিত হন এবং রাষ্ট্রপতি 12 জন সদস্যকে মনোনীত করেন। এই 12 জন সদস্যকে সাহিত্য, বিজ্ঞান, চারুকলা, সমাজদের প্রভৃতিতে পারদর্শীদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন।

অপরদিকে, লোকসভার সদস্যসংখ্যা রাজ্যসভার তুলনায় বেশি। লোকসভায় আছেন 552 জন সদসা। এদের মধ্যে অঙ্গরাজ্যগুলি থেকে 530 জন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে 20 জন নির্বাচিত হবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ইঙ্গ-ভারতীয়দের মধ্য থেকে 2 জন সদস্যকে মনোনয়ন করবেন।

[2] কার্যকালগত পার্থক্য:

রাজ্যসভা হল একটি স্থায়ী সভা। এই সভার প্রত্যেক সদস্যের কার্যকাল হল ৪ বছর। কিন্তু প্রত্যেক 2 বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে অবসর নিতে হয় এবং ওইসব শূন্যপদ নতুন সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণ করা হয়।

অপরদিকে, লোকসভার সাধারণ কার্যকাল হল ১ বছর। কিন্তু এই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার অর্থে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি লোকসভা ডেঙে দিতে পারেন। আবার জরুরি অবস্থা বজায় থাকরে লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো যায়।

[ 3] যোগ্যতাগত পার্থক্য:

রাজ্যসভার প্রার্থী হতে গেলে প্রার্থীকে কমপক্ষে 30 বছর বয়স্ক হতে হবে।

অপরদিকে, লোকসভার প্রার্থী হতে গেলে প্রার্থীকে কমপক্ষে 25 বছর বয়স্ক হতে হবে।

[4] ক্ষমতাগত পার্থক্য:

সাংবিধানিক দিক থেকে রাজ্যসভা ও লোকসভার ক্ষমতাগত সম্পর্ককে তিন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা-

[a] কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকসভার প্রাধান্য বেশি, রাজ্যসভার প্রাধানা কম, [b] কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজ্যসভার প্রাধান্য বেশি, লোকসভার প্রাধান্য কম,

[c] আবার এমন কিছু ক্ষেয়ে আছে যেখানে উভয়কক্ষই সমান ক্ষমতাসম্পন্ন।

[5] লোকসভার প্রাধান্য:

এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে লোকসভা বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। যথা-

[a] অর্থ বিল পাস:

অর্থ বিল পাসের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার মূলত কোনো ক্ষমতা নেই। রাজ্যসভা সুপারিশ করতে পারলেও লোকসভার পক্ষে তা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়।

[b] দায়বদ্ধতা:

মন্ত্রীসভা তার কাজের জন্য লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ গরে নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আবার লোকসভার আস্থা বা অনাস্থার ওপা মন্ত্রীসভার নির্দিষ্ট কার্যকালের পূর্বে টিকে থাকা নির্ভর করে।

[c] জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার:

জরুরি অবস্থা অনুমোদন করতে হলে রাজ্যসভা ও লোকসভার কমতা সমা হলেও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করার সময় লোকসডাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানালে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে পারেন।

[d] সাধারণ বিল পাস:

সাধারণ বিল পাসের ক্ষেত্রে উত্তয়ের ক্ষমতা সমান হলেও বিরোধ উপস্থিত হলে লোকসভা বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। অর্থাৎ কোনো বিল সম্পর্কে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতজেন উপস্থিত হলে একটি যৌথ অধিবেশন দ্বারা বিলটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এই অধিবেশনে লোকসভার স্পিকার সভাপতির ভূমিকা পালন করেন। আবার রাজ্যসভার তুলনায় লোকসড়ার সদস্যসংখ্যা বেশি বলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি পাস হয়ে যায়। কাজেই পরোক্ষভাবে লোকসভার প্রাধান্য এক্ষেত্রে বজায় থাকে।

[6] রাজ্যসভার প্রাধান্য:

সংবিধানে এমন কতকগুলি স্কের আছে যেগুলিতে রাজ্যসভা লোকসভার তুলনায় বেশি পরিমাণে ক্ষমতা ভোগের অধিকারী। যথা-

[a] স্থায়ী কক্ষ:

রাজ্যসড়া একটি স্থায়ী কক্ষা একে ভেঙে দেওয়া যায় না। রাজ্যসভার সদস্যদের

কার্যকালের মেয়াদও বছর। অথচ রাষ্ট্রপতি লোকসভাকে ভেঙে দিতে পারেন।

[b] উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণ:

উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য রাজ্যসভা এককভাবে প্রভাব গ্রহণ করার অধিকারী।

[c] রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন:

জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে সংসদে রাজ্যতালিকাভুক্ত কোনো বিষয়ে আইনপ্রণয়নের জন্য রাজ্যসভায় উপস্থিত ও ভোটপ্রদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে কোনো প্রভাব গ্রহণ করে তাহলে রাজ্যতালিকাভুক্ত সেই বিষয়ে সংসদ আইনপ্রণয়ন করতে পারবে।

[d] চাকরি সৃষ্টি:

জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে যদি এক বা একাধিক চাকরি সৃষ্টি করার প্রয়োজন আছে বলে রাজ্যসভা মনে করে এবং যদি ওই সভায় উপস্থিত ও ভোট প্রদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন দ্বারা প্রস্তাবটি গৃহীত হয় তাহলে সংসদ সে বিষয়ে আইনপ্রণয়ন করতে পারে।

[7] উভয়কক্ষ সমান ক্ষমতাসম্পন্ন:

এমন কতকগুলি ক্ষেত্র আছে যেখানে রাজ্যসভা ও লোকসভা উভয়ই সমান ক্ষমতার অধিকারী। যথা-

[a] জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণা:

রাষ্ট্রপতির দ্বারা ঘোষিত জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণাটি উভয়কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়।

[b] সংবিধান সংশোধন:

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভার ক্ষমতা সমান।

[c] রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও পদচ্যুতকরণ:

রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্লান্ত ব্যাপারে এবং তাঁকে পদ্মাত করার ক্ষেত্রে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমক্ষমতা ভোগ করে।

[c] সাধারণ বিল উত্থাপন:

সাধারণ বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রে উভয়সভা সমক্ষমতাসম্পন্ন। লোকসভা বা রাজ্যসভা-যে-কোনো কক্ষে সাধারণ বিল উত্থাপিত হতে পারে। কোনো কক্ষে বিলটি উত্থাপিত ও গৃহীত হলে সেটিকে অপরকক্ষে পাঠানো হয়। অপরককেও সেটি গৃহীত হতে হবে।

[e] পদাধিকারীকে অপসারণ:

কোনো কোনো পদাধিকারীকে অপসারণের ক্ষেত্রে উভয়কক্ষ সমক্ষমতার

অধিকারী হিসেবে কাজ করে। এই পদগুলি হল-নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ, মুখ্য নির্বাচনি অফিসার প্রমুখ। [f] আইনসভার অধিকার ডঙ্গ ও অবমাননা: কিছু কিছু বিচার সংক্লান্ত কাজের ক্ষেত্রে উভয়ের ক্ষমতা

সমান। যেমন-আইনসভার অধিকার কেউ ভঙ্গ করলে অথবা আইনসভার অবমাননা করলে উত্তয়কক্ষই কোনো সদস্যকে বা বহিরাগতকে শান্তিদানের অধিকারী।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading