লোকসভার গঠন:
ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা সংসদ দ্বিককবিশিষ্ট আইনসভা। এর নিম্নকক্ষ বা প্রথম কন্ধের নাম লোকসাভা লোকসভাকে জনপ্রতিনিধি কক্ষ বলা হয়। লোকসভা 552 জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এদের মধ্যে-
[1] অঙ্গরাজ্যগুলি থেকে নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা 530 জন,
[2] কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে নির্বাচিত সদস্যসংখা 20 জন,
[3] রাষ্ট্রপতি ইঙ্গ-ভারতীয়দের মধ্য থেকে 2 জন সদস্য মনোনয়ন করবেন।
তবে লোকসভার সদস্যদের চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
[1] অঙ্গরাজ্যগুলি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিংি,
[2] কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি,
[3] জাতীয় রাজধানী অঞ্চল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি এক
[4] রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত ইঙন-ভারতীয় প্রতিনিধি।
লোকসভায় তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যথা-
[1] তপশিদি জাতিভুক্তদের জন্য 79টি এবং
[2] তপশিলি উপজাতিদের জন্য 4০টি আসন।
লোকসভার সদস্য হতে গেলে প্রার্থীকে অবশ্যই কিছু যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। এই যোগ্যতাগুলি হল-
[1] প্রার্থীকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে,
[2] প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে 25 বছর হবে,
[3] সংসদ আইন করে তে যোগ্যতা স্থির করে দেবে, প্রার্থীকে অনুরূপ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
লোকসভার কার্যাবলি:
ডারতে দ্বিককবিশিষ্ট আইনসভার নিম্নকক্ষ হল লোকসভা। লোকসভার সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন বসে
একে জনপ্রিয় কঞ্চণ্ড বলা হয়। লোকসভার উল্লেখযোগ্য কাজগুলি হল-
1. আইনপ্রণয়নমূলক কার্যাবলি:
লোকসভা কতকগুলি আইনপ্রণয়নের অধিকারী। যথা কেন্দ্রতালিকা ও যুগ্মতালিকার ক্ষেত্রে লোকসভা আইন প্রণয়ন করতে পারে। আবার এমন কতকগুলি ক্ষেত্র আছে যেখানে সংবিধান অনুসারে লোকসভা রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইনপ্রণয়ন করতে পারে।
2. অর্থ সংক্রান্ত কার্যাবলি:
অর্থ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে লোকসভার ভূমিকা এককভাবে প্রতিষ্ঠিত। লোকসভা অথবা ও অর্থ সংক্রান্ত বিলের ক্ষেত্রে একক ক্ষমতার অধিকারী। কোনো বিল অর্থবিল কি না তা নিয়ে মতড়েন দেখা দিলে স্পিকার যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা-ই চূড়ান্ত বলে বিবেচ্য। তা ছাড়া কেবল লোকসভায় অর্থবিল উত্থালির হতে পারে। লোকসভায় অর্থবিল গৃহীত হলে তা রাজ্যসভার সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। রাজ্যসভা খুব বোই হলে 14 দিন পর্যন্ত বিলকে আটকে রাখতে পারে। ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্যসভা বিলটি ফেরত না পাঠানে বিলটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। আবার লোকসভা সরকারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। লোকসভা তার Estimate Committee দ্বারা সরকারি অর্থের যথাযথ বয় হচ্ছে কি না তার [3] মন্ত্রীসভা গঠন ও অপসারণমূলক কার্যাবলি: লোকসভা মন্ত্রীসভা গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন ক সাধারণত রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে তিনি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রীদের লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ গর্তের মধ্য থেকে মনোনীত করলেও রাজ্যসভা থেকে প্রয়োজন হলে মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।
3. কেন্দ্রীয় আইনসভা:
আবার জোকসড়া মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণও করতে পারে। মন্ত্রীসভা এবং ক্যাবিনেট সর্বদা লোকসভার কাছে সকল কাজের জন্য দায়বন্ধ থাকে। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ, প্রশ্ন উত্থাপন প্রকৃতির দ্বারা লোকসভা মন্ত্রীদের সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাছাড়া লোকসভা কসভা যণি ক্যাবিনেটের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে তাহলে সময় ক্যাবিনেট এবং মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। আবার যদি কোনো সরকারি বিল লোকসভা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে মন্ত্রীসভা ওই কক্ষের আস্থা হারিয়েছেন। এরূপ অবস্থায়
মন্ত্রীস ডাকে পদত্যাগ করতে হয়। তবে উল্লেখযোগ্য যে যদি রাজ্যসভায় বিলটি প্রত্যাখ্যাত হয় তাহলে মন্ত্রীসভার পদত্যাগের কোনো প্রশ্ন ওঠে না।
4. সংবিধান সংশোধনমূলক কার্যাবলি;
লোকসভা সংবিধান সংশোধনের কাজও করে থাকে। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলির ক্ষেয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য অঙ্গরাজ্যের আইনসভাসমূহের অন্তত অর্ধেকের সমর্থন দরকার হয়। যেমন-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, কেন্দ্রে-রাজ্য ক্ষমতা বণ্টন, সুপ্রিমকোর্ট সংক্রান্ত বিষয়, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ব্যাপারে, হাইকোষ্ট সংক্রান্ত ব্যাপারে, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নিতে হয়। এই বিষয়গুলি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেয়ে সংসদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে রাজ্যসভা ও লোকসভা উভয়ই সমান ক্ষমতার অধিকারী।
5. সাধারণ বিল পাস সংক্রান্ত কার্যাবলি:
লোকসভা ও রাজ্যসভা উত্তরাই সাধারণ আইনপ্রণয়নের ক্ষেত্রে সমান কথতা ডোগ করে। কোনো কক্ষে সাধারণ বিল অনুমোদিত হলে তা অপরকক্ষে পাঠানো হয়। কিন্তু যদি উভয় কন্ধের মধ্যে বিলটি অনুমোদনের বিষয় নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৪ নং ধারা অনুযায়ী একটি যৌথসভা ডাকেন। এই যৌথসভায় লোকসভার স্পিকার সভাপতিত্ব করেন। এই সময় ওই বিলটি ভাগ্য নির্ধারিত হয় সভায় উপস্থিত ও ভোটপ্রদানকারী সদস্যদের ভোটের দ্বারা। এখানে লোকসভার সদস্যসংখ্যা রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যার তুলনায় বেশি বলে শেষপর্যন্ত লোকসভার সমর্থনই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
6. অন্যান্য কার্যাবলি:
এ ছাড়াও লোকসড়া অন্যান্য আরও অনেক কাজ করে। এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি –
a. রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার:
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের সময় লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং উপস্থিত ও ভোটপ্রদানকারী সদস্যদের মধ্য থেকে যদি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের দ্বারা প্রভাব গ্রহণ করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে পারেন।
b.নিজ অভিমত প্রদান:
তপশিলি জাতি ও উপজাতি বিষয়ক কমিশন, নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষকের রিপোষ্ট, অর্থকমিশনের রিপোর্ট, কেন্দ্রীয়-রাষ্ট্রকর্তৃক কমিশনের রিপোর্ট প্রভৃতি আলোচিত হয়ে গেলে লোকসভা তার নিজ অভিমত জানায়।
c. বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলি;
লোকসভার কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজও আছে। যেমন-লোকসভা অধিকার জলজনিত কারণে কোনো সদস্যকে অথবা বাইরের কোনো ব্যক্তিকে শান্তি দিতে পারে।
মূল্যায়ন: লোকসভার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল লোকসভার কোনো সদস্য দীর্ঘদিন লোকসভায় উপস্থিত না থাকলে, এর কারণ স্পিকারকে জানাতে হয়। কিন্তু স্পিকারকে না জানিয়ে কোনো সদস্য যদি একটানা (অন্তত ৩০ দিন) সভায় অনুপস্থিত থাকে, তাহলে ওই সদস্যের আসনটি শূন্য আছে বলে লোকসভা ঘোষণা করতে পারে মূল্যায়ন: লোকসভার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল লোকসভার কোনো সদস্য দীর্ঘদিন লোকসভায় উপস্থিত না থাকলে, এর কারণ স্পিকারকে জানাতে হয়। কিন্তু স্পিকারকে না জানিয়ে কোনো সদস্য যদি একটানা (অন্তত 60 দিন) সভায় অনুপস্থিত থাকে, তাহলে ওই সদস্যের আসনটি শূন্য আছে বলে লোকসভা ঘোষণা করতে পারে।