হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা নির্ণয়ের দুটি দিক রয়েছে-নিম্নতম কালসীমা এবং ঊর্ধ্বতম কালসীমা। নিম্নতম বা পতনকাল নির্ধারণ অপেক্ষাকৃত সহজ। এখানে দিক চিহ্ন হিসেবে লোহার কথা বলা হয়। হরপ্পা সভ্যতায় লোহার কোনো নিদর্শন মেলেনি।
পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সিন্দু উপত্যকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সেখানে লোহার প্রচলন হয় 1500 সাল নাগাদ। সুতরাং, 1500 খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ সিন্ধু উপত্যকায় লোহার প্রচলন হয়। সুতরাং, 1500 খ্রিস্টপূর্বকে হরপ্পা সভ্যতার নিম্নতম কালসীমা বলে ধরা হয়। ঊর্ধ্বতম কালসীমা নিয়েই মূল সমস্যা। এ সমস্যা আজও চলছে। প্রথম দিকের প্রত্নতত্ত্ববিদগণ অনুমানের ভিত্তিতে নিজেদের মতো করে এই সভ্যতার কালসীমা নির্ধারণ করেছে।
হরপ্পা সভ্যতার, বিশেষত পরিণত হরপ্পা সভ্যতার অস্তিত্ব কতদিন ছিল সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট তারিখ নির্দেশ করা যায় না। হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জন মার্শাল মনে করেন, হরপ্পা সভ্যতার কাল খ্রিস্টপূর্ব 3250 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 2750 অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। মার্টিমার হুইলার-এর মতে, এই বিস্তৃতিকাল খ্রিস্টপূর্ব 2500 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দ পর্যন্ত। 1964 সালে ডি পি আগরওয়াল রেডিয়ো কার্বন-14 পদ্ধতির সাহায্যে হরপ্পা সভ্যতার কাল খ্রিস্টপূর্ব 2300 থেকে 1750 অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মত প্রকাশ করেছেন।
পূর্বে হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব নির্ধারণের জন্য নানাবিধ সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর নির্ভর করতে হত। তাই বিভিন্ন পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমিত কালপর্বের মধ্যে বড়ো রকমের পার্থক্য দেখা যেত। কিন্তু নতুন নতুন গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনতা সম্পর্কে অনুমানের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া অনেকটাই সম্ভব হয়েছে।
প্রাচীনত্ব নির্ণয়ের অন্যতম বৈজ্ঞিানিক পন্থা ‘রেডিয়ো কার্বন ডেটিং’ পদ্ধতির প্রয়োগ হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব নির্ণয়ের কাজ সহজ করে দিয়েছে এবং এই নির্ধারিত প্রাচীনতা বৈজ্ঞানিক বলে নির্ভরযোগ্য। হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর কার্বন ডেটিং করে বলা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব 2300 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1750 অব্দের মধ্যে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ, বিস্তার ও পতন ঘটে। হরপ্পা সভ্যতার সমগ্র অস্তিত্বকাল জুড়ে দেখা গেছে একই ধরনের ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 1750 অব্দ নাদাদ এই সভ্যতার অবসান ঘটে, অবশ্য হরপ্পা সভ্যতার অবক্ষয় ঘটে ক্রমে ক্রমে।
গত দশ হাজার বছরের মধ্যেকার প্রত্নবস্তুর কাল নির্ণয়ে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হল- রেডিয়ো-কার্বন বিশ্লেষণ, ② ডেনড্রোক্লোনলজি বা বৃক্ষকাণ্ডের বলয়াকার বেড় বিশ্লেষণ এবং তাপদ্যুতি বিশ্লেষণ। প্রাচীনতা বিষয়ে সন্ধান লাভের জন্য কার্বন-14 বিশ্লেষণ প্রত্নতত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। কার্বন-14 পরীক্ষা দ্বারা জানা গেছে মহেন-জো-দারোতে খ্রিস্টের জন্মের 2400 বছর আগে বসতি স্থাপিত হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব 1750 অব্দ পর্যন্ত তা বিদ্যমান ছিল। এ ছাড়া ডেনড্রোক্লোনলজি পদ্ধতির সাহায্যে হরঙ্গা যুগের প্রভাবায়ুর প্রস্তুতি চিরদিন ভরা গরুর প্রয়োপ্তে। প্রতবিদুৎ বিংরক্ষণের গাতাযো ভরিদদ যুক্তিসং, পোড়ামাটির পার ইত্যটির পতন হয়েছে।