হরপ্পাবাসীদের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে যা জানো লেখো।

অথবা, সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

হরপ্পাবাসীদের/সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন:

1921-22 সালে আবিষ্কৃত হরপ্পা সভ্যতা পশ্চিমে মাকরান উপকূল থেকে পূর্বে আলমগীরপুর, উত্তরে জম্বুর মান্ডা থেকে দক্ষিণে গোদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আয়তনের দিক থেকে সমগ্র এলাকাটি প্রাচীন মিশরের চেয়ে 20 গুণ বড়ো ছিল। এটিই ছিল প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম সভ্যতা। কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যকে নির্ভর করে হরপ্পা সভ্যতা আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধ ছিল। মানুষের জীবনযাত্রা ছিল সচ্ছল।

হরপ্পাবাসীদের/সিন্ধু সভ্যতার কৃষি:

হরপ্পা সভ্যতার আর্থিক সমৃদ্ধি বহুলাংশে তার গ্রামাঞ্চলের উন্নত কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রচুর বৃষ্টিপাত, সিন্ধু ও তার শাখানদীর জলে বিধৌত এই এলাকা ছিল যথেষ্ট উর্বর। রবিশস্য হিসেবে গম ও যবের চাষ হত। খারিফ শস্য হিসেবে তুলো, তিল উৎপন্ন হত। সম্ভবত সমগ্র বিশ্বে ধানের চাষ সিন্ধু উপত্যকাতেই প্রথম শুরু হয়। কালিবঙ্গানে প্রাক্-হরপ্পা যুগের লাঙ্গালের সন্ধান মিলেছে। যাই হোক, বিপুল পরিমাণে কৃষিজ উৎপাদন হওয়ায় শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যের পথ প্রশস্ত হয়।

হরপ্পাবাসীদের/সিন্ধু সভ্যতার শিল্প:

হরপ্পা সভ্যতায় নানা ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছিল। যেমন-বয়ন শিল্প, প্রস্তর শিল্প, ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, গজদন্ত শিল্প, কাঠের কাজ, চিনামাটির কাজ, ইট শিল্প, অলংকার শিল্প, চুনাপাথরের কাজ প্রভৃতি। বস্ত্রবয়ন শিল্প এই সভ্যতার প্রধান শিল্প। এই অঞ্চল থেকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুতিবস্ত্র রপ্তানি করা হত। প্রস্তর শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। এই অঞ্চল থেকে পাথরের হাতিয়ার, মূর্তি এমনকি জেড, কার্নেলিয়ন, ল্যাপিসলাজুলি প্রভৃতি দামি পাথরের তৈরি শৌখিন দ্রব্য পাওয়া গেছে। ধাতুশিল্পীরা তামা, ব্রোঞ্জের নানা দ্রব্যাদি, যথা-কান্তে, কুঠার, প্রদীপ, কলশি, ছুরি, বাসন, মূর্তি প্রভৃতি তৈরি করত। সোনা ও রূপার অলংকার নির্মাণেও শিল্পীরা দক্ষ ছিল। মৃৎশিল্পের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। কুমোরের চাকা ব্যবহার করে নানা আকারের ও নানা রঙের মৃৎপাত্র তৈরি হত, সেগুলি আগুনে পুড়িয়ে তাদের গায়ে রং দেওয়া হত। পাত্রগুলির গায়ে আঁকা থাকত লতাপাতা, ফুল এবং পশুপাখির ছবি। হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত পোড়ামাটি বা চুনাপাথরের তৈরি সিলগুলিতে বিভিন্ন গাছপালা, পশুপাখি ও দেবদেবীর মূর্তি উৎকীর্ণ আছে। এগুলি তাদের শিল্পদক্ষতার পরিচয় বহন করে। এ ছাড়া ইটভাটা, কাঠ, চিনামাটি ও হাতির দাঁতের কাজেও বহু মানুষ নিযুক্ত ছিল।

পরিশেষে বলা যায়, কৃষি, শিল্প, ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে এইরকম একটি সুমহান সভ্যতা গড়ে ওঠে। এখানে আর্থিক সচ্ছলতা থাকার জন্য মানুষের জীবনযাত্রার মান ছিল উন্নত।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading